ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: কথিত আছে, আশ্বিনের শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব হয়। এই দিনে প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্করের পৈতৃক ভিটে লাভপুরের বাড়িতে তারা মায়েরও পুজো হয়। সতী পীঠের অন্যতম লাভপুরের ফুল্লরা মায়ের মন্দিরে প্রথমে পুজো হয়, তার পরে তারাশঙ্কের বাড়িতে তারা মায়ের পুজো শুরু হয়। 


শুক্রবার রাতে এই পুজো হয়। এখানে তারা মা দশ মহাবিদ্যার এক বিদ্যা রূপে পূজিত হন। তারাশঙ্করের পরিবারের সদস্য ছাড়াও এই পুজোতে যোগ দেন আশেপাশের গ্রামের কয়েকশো মানুষ। এবার এই পুজো ১২৭ বছরে পড়ল।  


তারাশঙ্করের পরিবার সূত্রে জানা যায়, লাভপুরের জমিদার হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যয় দীর্ঘ দিন নিঃসন্তান ছিলেন। পরে ফুল্লরা মন্দিরে সাধনা করতে আসা তান্ত্রিক রামজী গোঁসাই হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী প্রভাবতী দেবীকে আশ্বিন মাসে দূর্গা পুজোর পর শুক্লা চর্তুদশী রাতে দশ মহাবিদ্যার এক বিদ্যা তারা মায়ের পুজো করতে বলেন। আর তার পরের বছরেই জন্ম হয় তারাশঙ্করের। তাঁর জন্মের পর তারা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় লাভপুর গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে একটি মাঠে। তার পর থেকে সেখানেই পুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে মাঠটি তারামা ডাঙা নামে পরিচিত।


এখানে দেবীর গায়ের রঙ নীল, সারা দেহে জড়ানো থাকে সাপ। পরনে বাঘ ছাল, মাথায় গেড়ুয়া জটা, গলায় মুণ্ড মালা এবং হাতে কৃপাণ। সন্ধ্যায় পুজো শুরু হলেও চলে মধ্যরাত্র পর্যন্ত। পুজোর সঙ্গে চলে যজ্ঞ । তারাশঙ্কর যত দিনে জীবিত ছিলেন তত দিন তিনি পুজো করিয়েছেন। তার লেখা গণদেবতা, ধাত্রীদেবতা, কবি সহ বিভিন্ন উপন্যাসে তারা-মা এর প্রসঙ্গ এসেছে বিভিন্ন ভাবে। 


গত ৩০ বছর ধরে তার মায়ের পুজো করে আসছেন পুরোহিত সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, আমারা পূর্বপুরুষ ধরে আমারা এই পুজো করে আসছি। এখানে তারা মা দশ মহাবিদ্যার এক বিদ্যা রূপে পূজিত হন। এই পুজো দেখতে আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় জমান বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে।


আরও পড়ুন, আজ ধন সম্পদের দেবীর আরাধনা, লক্ষ্মীপুজোর সময় কী কী উপকরণ অবশ্যই রাখতে হবে?


এদিকে,  আশ্বিনের শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে বছর তারাপীঠে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ভোর ৩টেয় গর্ভগৃহ থেকে তারা মায়ের মূর্তি বের করে বিরাম মঞ্চে তাঁর ছোট বোন মুলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দিরের অভিমুখে পশ্চিমদিকে বসানো হয়। কুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর পরানো হয় রাজবেশ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে মঙ্গল আরতি।