পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : লক্ষ্য ছিল, হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল বাঁচানো। সেই প্রার্থনা নিয়েই বাঁকুড়া (Bankura) রামকানালী গ্রামে শুরু হয়েছিল গজলক্ষ্মী পুজো (Gajalakshmi Puja)। একশো বছরের বেশি পুরনো সেই পুজো আজও ধুমধাম করে পালিত হয় এই গ্রামে। 


বাঁকুড়া জেলায় বিভিন্ন অংশ একটা সময় জঙ্গল অধ্যুষিত ছিল। সেই সময় দলমার দামালদের আনাগোনা লেগেই থাকত। আজ থেকে একশো বছর আগেও এই ছবি ধরা পড়ত। তার প্রমাণ মেলে জেলার বেলিয়াতোড় থানার  রামকানালী গ্রামের গজলক্ষ্মীর আরাধনায়। এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় ১২৬ বছর আগে হাতির তাণ্ডব থেকে জমির ধান, মাঠের ফসল, বাড়িঘর, এমনকী নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের পূর্ব-পুরুষেরা প্রচলন করেন দেবী গজলক্ষ্মীর পুজোর। 


এখানে দেবী লক্ষ্মী 'গজ'-অর্থাৎ হাতির পিঠে অধিষ্ঠাত্রী। দুই দিকে দুই সখী বেষ্টন করে থাকেন দেবী প্রতিমাকে। আর একচালার প্রতিমার দুই পাশে থাকে দু'টি ময়ূর। অভিনব আদলে তৈরি এই লক্ষ্মী প্রতিমাই গ্রামে পূজিত হয়ে আসছেন।


কথিত আছে, এক সময় এই রামকানালী গ্রামে (Ramkanali Village) হাতির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। তখন গজ বাহিনীর হামলার হাত থেকে রেহাই পেতে এই গজলক্ষ্মীর আরাধনা শুরু করেন গ্রামবাসী। বন দফতর সূত্রে খবর, ৬০টির বেশি হাতি বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ জঙ্গলে রয়েছে। বন দফতরের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই তাদের ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে। জঙ্গল থেকে যাতে না হাতির দল লোকালয়ে চলে আসে, সেই কারণে বন দফতর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। এই গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, আজও গ্রামে হাতির হানা থেকে শস্য বাঁচাতে হলে এই দেবীর কৃপা লাভ করতেই হবে।


প্রায় ১২৬ বছর আগে শুরু হওয়া রীতি মেনে নিষ্ঠার সাথে কোজাগরী পূর্ণিমায় ফি বছর দেবী গজলক্ষ্মীর পুজোর আয়োজন করেন রামকানালী গ্রামের বাসিন্দারা। জাঁকজমক করে পুজো করা হয়। আত্মীয়-স্বজনরাও এই লক্ষ্মীপুজোর দিনে ভিড় জমাতে শুরু করেন।


শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের ১৫ থেকে ২০ টি গ্রামের মানুষ লক্ষ্মীপুজো দেখতে আসেন এখানে। গ্রামে বাউল এবং তার সঙ্গে চার দিন ধরে চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ধর্মীয় উপাচার মেনে যথারীতি পালিত হয় রামকানাই গ্রামের গজলক্ষ্মী পুজো। 


আরও পড়ুন ; 'এসো মা লক্ষ্মী', আজ বাংলার ঘরে ঘরে ধন-সম্পদের দেবীর আরাধনা