ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কঙ্কালীতলা: বীরভূমে ফের প্রকাশ্যে চলে এলো জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের অনুগামীদের মতপার্থক্য (TMC inner Clash)। বুধবার সকালে হঠাৎ বাইক মিছিল করে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে কঙ্কালীতলায় গেলেন কাজল শেখ ঘনিষ্ঠ নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি। অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করলেন কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। বৈঠকের সময় সেখানে হাজির ছিলেন না অনুব্রত ঘনিষ্ঠ উপপ্রধান। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে বীরভূমের রাজনৈতিক মহলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এলাকার উন্নয়ন থমকে রয়েছে বলে দিনকয়েক আগে মন্তব্য করেছিলেন জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের লায়েকবাজারে, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বসে সভাধিপতির ওই মন্তব্য ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছিল দলে। বুধবার সেই কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এসেই এলাকার উন্নয়নের কাজ নিয়ে বৈঠক করলেন নানুরের বিধায়ক এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতির ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত বিধান মাঝি।
ঘটনাচক্রে কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকা নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাধীন। ফলে, বিধায়ক বৈঠক করতেই পারেন। কিন্তু, এই একটি পঞ্চায়েত যেখানকার নেতৃত্ব তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ। কঙ্কালীতলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরে।
সেখানে সর্মথকদের নিয়ে বিরাট বাইক মিছিল করে কাজল শেখের ‘ঘনিষ্ঠ’ বিধায়ক এসে হঠাৎ উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করায় দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কি অনুব্রত ঘনিষ্ঠ উপপ্রধান মামন শেখের হাত থেকে পঞ্চায়েতের রাশ নিজের হাতে নিতে চাইছেন কাজল ঘনিষ্ঠ বিধায়ক? বুধবার বৈঠকে নানুরের বিধায়ক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হানিফ শেখ, পঞ্চায়েত প্রধান ছবিরানি সাহা। বৈঠক উপলক্ষে পঞ্চায়েতে জেলা সভাধিপতির অনুগামীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচুর পরিমাণে পুলিশও মোতায়ন করা হয়েছিল।
কিন্তু মামন-সহ ১৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য গরহাজির ছিলেন। এমনকী বোলপুর-শ্রীনেকতন পঞ্চায়েত সমিতি এবং এলাকার জেলা পরিষদের সদস্যদেরও এই দিনের বৈঠকে দেখা যায়নি। বরং, মামনের নেতৃত্বে এই দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের মিছিল বেরোয়। এই মিছিলে পঞ্চায়েতের সদস্যরা, কর্মী ও সমর্থক সহ উপস্থিত ছিলেন মন্দিরের সেবায়েতরা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, “অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ' ‘কঙ্কালীতলায় বহিরাগতদের গুণ্ডারাজ মানছি না, মানব না'! এই সব মিলিয়ে কঙ্কালীতলা হঠাৎ করে চলে এসেছে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।
এই অঞ্চলে ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল ‘লিড’ পায়নি জানিয়ে বিধায়কের দাবি, “জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ কেতুগ্রাম ও নানুর বিধানসভার দায়িত্ব পাওয়ার পরে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ও এই বছর লোকসভা নির্বাচনে আমাদের বিপুল লিড হয়েছে।” বিধায়কের এই মন্তব্যেও চর্চা বেড়েছে। কারণ, ‘১৯ ও ‘২১-এর দু’টি ভোটেই বীরভূমের ১১টি এবং পূর্ব বর্ধমানের তিন বিধানসভা কেন্দ্ৰ (কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট) দায়িত্বে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
২০১৮ ও '২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রধান থাকলেও পঞ্চায়েতের পুরো কাজকর্ম বকলমে দেখেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ উপপ্রধান ওহিদউদ্দিন ওরফে মামন। তিনি কেন বৈঠকে ছিলেন না।
কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতে বৈঠক করছেন নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি। সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ হানিফ ও পঞ্চায়েত প্রধান ছবিরানি সাহা।
এই বিষয়ে মামন বলেন, “আজ পঞ্চায়েতে কোনও বৈঠক রয়েছে বলে আমার জানা ছিল না। আমাকে ডাকাও হয়নি। আমি এবং বাকি সদস্যরা ছিলাম না।” কেন ডাকা হল না? উপপ্রধান বলেন, “সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না। তবে, তিনি (বিধান মাঝি) আমাদেরই বিধায়ক। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম দেখতে এসেছেন, এতে অসুবিধা কোথায়।”
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Hooghly News: শ্যুটআউটে অভিযুক্ত, গোঁফ পাকাতে পাকাতে বলল, 'তৃণমূল করি' !