ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: তিহাড় জেল থেকে ফেরার পর প্রথম সভায় সবাইকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছিলেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। যদিও সেদিন তাঁর কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বীরভূমের সভাধিপতি তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে। এবার কাজলের বিজয়ার কর্মসূচিতে দেখা গেল না অনুব্রতকে। এমনকি কর্মসূচির কোনও ব্যানারে ছিল না অনুব্রতর ছবিও, যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে কি তাহলে অল ইজ নট ওয়েল? (Birbhum News)


তিহাড় থেকে বেরিয়ে দলকে বেঁধে বেঁধে থাকার বার্তা দিয়েছেন অনুব্রত। তাঁর বক্তব্য, "কোনও হানাহানি করবেন না, কোনও ঝগড়াঝাঁটি করবেন না। সবাইকে নিয়ে চলুন। পাশে ডেকে নিন, কাছে টেনে নিন। তাতে ভাল হবে। দলটা আরও বৃদ্ধি পাবে।" মুরারই বা নলহাটির বিজয়া সম্মিলনীতে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন অনুব্রত। (Anubrata Mondal)

কিন্তু, তারপরও প্রশ্ন উঠছে, বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে সব কিছু সুরে বাজছে তো? এই প্রশ্নটা উঠছে, কারণ জেল-মুক্তির পর, এখনও পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল চার চারটি বিজয় সম্মিলনীতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, জেলা সভাপতির একটি সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না, জেলা রাজনীতিতে অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত, বীরভূমের বর্তমান জেলা সভাধিপতি কাজল।

আর, শনিবার নানুরে কাজলের বিজয়া সম্মীলনিতে উপস্থিত থাকলেন না খোদ অনুব্রত। তবে, শনিবারই ময়ূরেশ্বর ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এসবের মধ্যেই, নানুরের সভার জন্য যে ফেস্টুন করা হয়েছে, সেখানেও নেই অনুব্রতর নাম বা ছবি। শুধু তাই নয়, সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ গদাধর হাজরা। তাঁর কথায়, "আমার বাড়ির পাশেই বিজয়া সম্মিলনী হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলা হয়নি।"


এর মধ্যেই আবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কাজল-ঘনিষ্ঠ নানুরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "অনুব্রত মণ্ডল থাকার সময় ভোটের ফলের থেকে কোর কমিটির সময় নির্বাচনের ফল ভাল। তাই অনুব্রত মণ্ডল জেল থেকে আসার পরও মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন কোর কমিটি জেলা পরিচালনা করবে।"

শনিবারের সভায় অনুব্রত যে আসবেন না, তা শুক্রবারই কার্যত বলে দিয়েছিলেন কাজল। তাঁর কথায়, "শনিবার তিনটি সভা আছে। আর অনুব্রত মণ্ডল শারীরিক সক্ষমতা কতটা আছে, আমার থেকে আপনারা ভাল বলতে পারবেন। তিনটি সম্মেলন করার মতো ক্ষমতা তাঁর আছে বলে মনে হয় না। সময় পেলে অবশ্য়ই আসবেন।" সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে অনুব্রত বলেন, "একটি বিজয়া সম্মিলনী। এক জায়গায় তো সব মানুষ যেতে পারবেন না, যাওয়া সম্ভব? তাহলে? আমি বিতর্কে যাব না।"

সোমবার দুপুরে সিউড়ির বেণীমাধব সকুলের মাঠে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী। সেখানে থাকার কথা রয়েছে অনুব্রত। একই সময়ে পুরন্দরপুরে বিজয়া সম্মিলনী আয়োজন করা হয়েছে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের তরফে। জেলা সভাপতিকে বাদ রেখে তৃণমূলের বিজয় সম্মিলনীর আয়োজন নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, "বিজয়ে সম্মিলনীর নামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন করে প্রকট হচ্ছে।" সব মিলিয়ে দিনে দিনে জটিল হচ্ছে বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণ।