ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও নান্টু পাল, বীরভূম: শিক্ষাঙ্গনে হেনস্থার শিকার এক অধ্যাপিকা। কাঠগড়ায় স্থানীয় তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের নেতা। ঘটনাস্থল বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মহাবিদ্যালয়। 


অভিযোগ উঠেছে, দুই দফায় কলেজের টিচার্স রুমে ঢুকে ওই শিক্ষিকাকে (Teacher Heckled) হেনস্থা করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) ব্লক সভাপতি মানব মণ্ডল এবং তাঁর সঙ্গীরা। সেই ঝামেলায় ভিজিও নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন ওই শিক্ষিকা। কলেজের অধ্যক্ষকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে, পাশাপাশি ময়ূরেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও পুলিশ এখনও অভিযোগ গ্রহণ করেনি বলে ওই শিক্ষিকার দাবি। পুলিসের দাবি, ওই অধ্যাপিকা মৌখিকভাবে বিষয়টি থানায় জানিয়েছেন। কলেজে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অধ্যাপিকাকে হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানব মণ্ডল।   


কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর কলেজের কালচারাল বিভাগ সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) খরচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছিল। তাতে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ কালচারাল বিভাগকে সমর্থন করে। যদিও তা সমর্থন করেননি অধ্যক্ষ মৃণালকান্তি দাস। তিনি টিচার্স কাউন্সিলকে উপেক্ষা করে নিজের পছন্দমতো অধ্যাপক ও ছাত্রদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন বলে অভিযোগ। এই নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত।


কালচারাল বিভাগের কনভেনার অধ্যাপিকা রোশনি দে বলেন, 'যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী আমাদের সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেয় কিছু বহিরাগত। তাঁদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। বুধবার কলেজের অভ্যন্তরীণ মিটিংয়ে তারই প্রতিবাদ করি৷ মিটিংয়ের আলোচনা কোনওভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছে যায়। এরপরই মানব মণ্ডল কিছু বহিরাগত ও রানিং স্টুডেন্টদের নিয়ে টিচার্স রুমে ঢুকে আমাকে হেনস্তা করতে শুরু করে। ওরা রাজনৈতিকভাবে আমাকে দিয়ে কিছু বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে দুপুরে দলবল নিয়ে এসে একইভাবে হেনস্তা করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা পুজো করলেও শিক্ষকদের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকে। শিক্ষকদের হাত দিয়েই টাকা পাশ হয়। ওরা সেই টাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাইছে। কার্যত এদিন ওরা আমাকে শাসিয়ে যায়। অধ্যক্ষর সিদ্ধান্তের জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিন পাশের ঘরে অধ্যক্ষ বসে থাকলেও তিনি একবারের জন্য টিচার্স রুমে আসেননি।'


মানব মণ্ডল বলেন, 'ওই অধ্যাপিকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা চেয়েছিলাম এতদিন যেভাবে ছাত্র সংসদ পুজো করে আসছে সেভাবেই হোক। পড়ুয়ারা অধ্যক্ষকে একটি লিখিত আবেদনও দেন। অধ্যক্ষ একটি কমিটি তৈরি করেন। তার পরিপেক্ষিতে কলেজের আলোচনায় ওই অধ্যাপিকা কয়েকজন ছাত্রর সম্পর্কে কুরুচিকর ভাষা প্রয়োগ করেন। কেন এমন ভাষা প্রয়োগ করা হল সেটা জানতেই টিএমসিপির ব্লক সভাপতি হিসেবে গিয়েছিলাম। ওই অধ্যাপিকাকে কোনও হেনস্তা করা হয়নি।' যদিও অধ্যাপিকার দাবি, এখন কলেজে কোনও ছাত্র সংসদই নেই। দীর্ঘদিন কলেজে ভোট হয়নি। তিনি বলেন, 'আমি সমস্ত বিষয়টি লিখিত আকারে অধ্যক্ষ ও থানায় জমা দিয়েছি।'


বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, 'এতদিন ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই পুজো করতেন। এবার টিচাররা বলছিলেন তাঁরা পুজো করবেন। এনিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। আমি চেয়েছিলাম একসঙ্গে পুজো করতে। কিন্তু সেটা হয়নি বলেই স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতি হিসেব আমি ছাত্র, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী নিয়ে কমিটি তৈরি করে দিই। বহিরাগত কেউ এদিন কলেজে এসেছিল বলে আমি জানি না।'


আরও পড়ুন: ভালবাসায় উড়ল সব বাধা! বাড়িতেই বাসুদেবকে সিঁদুর পরালেন অমিত