ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে আগেই। একাই জীবন কাটছিল সিউড়ির (Suri) বাসিন্দা বাসুদেব চক্রবর্তীর। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) একজনের সঙ্গে আলাপ। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর সেখান থেকেই তৈরি হয় সম্পর্ক। শেষ পর্যন্ত আবার বিয়ে করলেন সিউড়ির বাসুদেব। এবার এক যুবককে। মন দেওয়া-নেওয়া শেষে হাওড়ার আন্দুলের (Hiwrah Andul) বাসিন্দা অমিত মল্লিককে বিয়ে করলেন বাসুদেব চক্রবর্তী। বুধবার রাতে বাড়িতেই হয় মালাবদল, সিঁদুরদান। বুধবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় বিয়ের অনুষ্ঠান।


সিউড়ির কড়িধ্যার বাসিন্দা চক্রবর্তী পরিবার। বাড়ির ছেলে বাসুদেবের এমন সিদ্ধান্তে খুশি পরিবারের সকলেই। দেশে এখন সমকামী সম্পর্ক অপরাধের আওতাভুক্ত নয়। যদিও সমকামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিয়ের (Same Sex Marriage) আলাদা করে আইনি স্বীকৃতিও নেই। তার উপর কখনও সমাজের চোখরাঙানি, কখনও উপহাস। বাধা-বিপত্তি অনেক। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা করেননি তাঁরা। নিজেদের সম্পর্কের উপর ভরসা করেই সেরে ফেলেছেন বিয়ে। আর এতে বাসুদেব পাশে পেয়েছেন তাঁর পরিবারকে। বাড়ি থেকে এতদূরে বিয়ে, অনুষ্ঠান হবে না? পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, সোমবার কড়িধ্যার বাড়িতে বাসুদেব ও অমিত ফিরলে ভোজের আয়োজন করা হবে।      


সিউড়ির ১নম্বর ব্লকের কড়িধ্যা সেনপাড়ার বাসিন্দা বাসুদেব চক্রবর্তী ওরফে বাসু। হাওড়া আন্দুলের বাসিন্দা অমিত মল্লিক। প্রায় সাত মাস আগে তাঁদের পরিচয় হয়। তারপর থেকেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবার কী ভাবছে? বাসুদেবের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, বাইরে পাঁচ জনে কী বলবে তা নিয়ে তাঁদের কিছু যায় আসে না। বাড়ি ছেলে যেভাবে খুশি থাকবে তাতেই তাঁরা খুশি বলে জানালেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাসুদেব জানান, সাত মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর আলাপ হয় অমিতের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মাসখানেক আগে তাঁরা দুইজন এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বাসুদেব বলেন, 'আমরা যে একে অন্যকে ভালবাসি, তা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলাম। আমি এখনও তেমন কিছু করি না। তবে অমিত একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। তাই দু'জনেই বিয়ের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।'


কড়িধ্যার সেনপাড়ায় বাসুদেবের বাড়ি খুঁজতে গেলে তাঁরা বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছেন। তার সঙ্গেই তাঁদের ঠোঁটের কোণে ছিল মুচকি হাসি। যদিও বাড়ির ছবি একদম আলাদা। বাসুদেবের আত্মীয়রা বলছেন, 'পাড়া-পড়শি কার কেমন লেগেছে বলতে পারব না, তবে আমাদের খুবই ভাল লেগেছে। পাড়ার বন্ধুরাও ওঁদের অপেক্ষা করছেন। ওঁরা বাড়ি ফিরলে আমরা সকলে মিলে খাওয়ার আয়োজন করব।' বাসুদেব চক্রবর্তীর ঠাকুমা রিমা চক্রবর্তী বলেন, 'সমাজে হয়তো এমন ঘটনা বিশেষ ঘটে না। কিন্তু কারও কথায় আমরা কিছু মনে করি না। আমাদের যা ঠিক মনে হয়, সেটাই করি। আমি বাড়িতে বরণ করেই ঢোকাবো।'


আরও পড়ুন: হিংসায় তছনছ উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানি, জখম অন্তত ২৫০! মৃত্যু একাধিক