ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও পরিতোষ দাস, বীরভূম: তিনি জেলে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের (panchayat election) বৈতরণী পার করার জন্য বীরভূমে (birbhum) অনুব্রত মণ্ডলের (anubrata mondal) উপরই ভরসা রেখেছে তৃণমূল (TMC)। সূত্রের খবর, এবার তাঁরই নির্দেশে ভোটের মুখে ডানা ছাটা হল নানুরের (Nanur) বিধায়ক (MLA) বিধানচন্দ্র মাঝির (bidhanchandra majhi)। বিধানচন্দ্রের হাতে থেকে তিনটি পঞ্চায়েত কেড়ে নিয়ে নানুরের তিন নেতাকে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। বিরোধীদের দাবি, এই নির্দেশ ঘিরে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যাবে নানুরে। 


প্রেক্ষাপট...
বীরভূমের দাপুটে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এখন জেলবন্দি। তবে নভেম্বরের শেষ দিকে বীরভূমে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বৈঠক করেন তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওই জেলার দায়িত্বে থাকছেন কেষ্টই। আপাতত তাঁর অনুপস্থিতিতে এই দায়িত্ব সামলাবেন চার তৃণমূল নেতা। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে গঠিত এই চার সদস্যের কোর কমিটিরই পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত বীরভূমে দল পরিচালনা করার কথা। তবে দলের রাশ আলগা হতে দিতে রাজি নন অনুব্রত। জেল থেকে আদালতে এসে নেতা কর্মীদের একাধিক নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সলা-পরামর্শও করছেন। সূত্রের খবর, এ বার তাঁরই নির্দেশে নানুরের বিধায়কের হাত থেকে তিনটি পঞ্চায়েত কেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, বিধানচন্দ্র মাঝি লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের ঘনিষ্ঠ। আর হালে নানা কারণে অভিজিৎ এবং অনুব্রতের দূরত্ব বেড়েছে বলে সূত্রের খবর। সেখান থেকেই কি নানুরের বিধায়কের ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত? জল্পনা এমনই। 


নতুন কারা?
তৃণমূল সূত্রে খবর, আপাতত সেখানকার দায়িত্ব পাচ্ছেন নানুরের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, কাজল শেখ এবং নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা। সুব্রত, গদাধর বরাবর অনুব্রত ঘনিষ্ঠ হলেও বিরোধী শিবিরে রয়েছে কাজল শেখ। তৃণমূল একাংশের ব্যাখ্যা, কাজল অনুব্রত বিরোধী হলেও নানুরে তাঁর নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই ভাবে পঞ্চায়েত ভাগ নিয়ে নতুন করে যাতে নানুরে কোন অশান্তি না হয় তা মথায় রেখে এই সিদ্ধন্ত নেওয় হয়েছে। এই বিষয়ে বীরভূমের তৃণমূল সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'বিধানচন্দ্র মাঝি নানুরের বিধায়ক। তিনি পুরো বিধানসভা এলাকা দেখেন। দল মনে করেছে তিনটি পঞ্চায়েতে ভাল করে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাই নানুরের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'যদিও সুব্রত ভট্টাচার্যের মতে, 'এটা সাংগঠনিক ব্যাপার। বাইরে মুখ খোলা যাবে না।' কিন্তু যাঁকে নিয়ে কথা সেই বিধানচন্দ্র মাঝি কী মনে করেন? তাঁর কথায়,'দলের কাজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন যাঁরা জেলায় দায়িত্বে আসবেন বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা নির্দেশ দেবেন, সেই ভাবে চলব।' তবে বিধায়ক হিসেবে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে যেতে যে কেউ তাঁকে নিষেধ করতে পারেন না, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। গোটা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অন্য ভাবে দেখছে বিজেপি। দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, 'নানুরের বিধায়ক লাভপুরের বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। তাই এই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতা কাড়লে নানুরে তৃনমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হবে।'


আরও পড়ুন:'বিজেপিকে ঝেঁটিয়ে বাংলাদেশে পার করে দেব', হুমকি জ্যোতিপ্রিয়-র