সমীরণ পাল, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে, বোমা মারার হুমকি দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তারপর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে বারবার ঝড় তুলেছে তাঁর নানা হুমকি-হুঁশিয়ারি। বিরোধী থেকে পুলিশ কিংবা বিদ্বজ্জন। তাঁর নিশানা থেকে বাদ যাননি কেউই।
' তোমরা যদি মস্তান হও, আমি ডন...আর তুমি যদি মানুষ হও. আমিও মানুষ ' সিনেমায় তিনি পছন্দ করতেন ভিলেনদের! আওড়াতেন শোলের গব্বর সিংয়ের সংলাপ! তবে রাজনৈতিক বিরোধীদের কাছে অনুব্রত মণ্ডল কোনও ভিলেনের থেকে কম ছিলেন না! আর তাঁর হুমকি-হুঁশিয়ারিও ছিল রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তোলার পক্ষে যথেষ্ট!
'পুলিশকে বোমা মারুন, বাড়িতে হামলা করুন... আমি বলছি বোমা মারতে'অনুব্রত মণ্ডল নামটা প্রথম চর্চায় আসে, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। কারণ ছিল তাঁর সেই হুমকি! যা এখনও কেউ ভুলতে পারেন না! তিনি বলেন, 'পুলিশকে বোমা মারুন, বাড়িতে হামলা করুন...' ' যে তাণ্ডবলীলা আমি খেলে দেব, ভয়ঙ্কর খেলে দেব আমি। কটা বাজে ঘরিতে? চারটে পনেরো। ৭টা পর্যন্ত সময় দিলাম। ইমিডিয়েটলি অ্যারেস্ট করুন। কোনও কাহিনী শুনব না। 'বীরভূমে তাঁর দাপট ছিল এতটাই যে, পুলিশকেও রেয়াত করতেন না তৃণমূলের জেলা সভাপতি। DSP কাশীনাথ মিস্ত্রিকে হাতের ঘড়ি দেখিয়ে শাসিয়েছিলেন এই অনুব্রত মণ্ডল। কব্জি কেটে নেওয়া , চোখ উপড়ে নেওয়া, শুঁটিয়ে লাল করে দেওয়া , অনুব্রতর হুমকিতে বাদ যায়নি কিছুই! কখনও আবার দলীয় সভা থেকে বিক্ষুব্ধদের গাঁজার কেস দিয়ে অ্যারেস্ট করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি। বলেছেন, সিপিএম চোখ দেখাবেন না, উপড়ে নেব... । ইঁদুরের বাচ্চা, বিষ দিয়ে মারুন ।
' উনি নাকি বলছেন, আমাকে রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। আমি এখনও বলছি, রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। মিথ্যাবাদী কবি আমি নই।'২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূমে বিরোধীদের দমিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে ‘মুক্ত গণতন্ত্র’ নামক কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লেখেন,যথার্থ এই বীরভূমি-উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসেপেয়েছি শেষ তীরভূমি-
দেখ্ খুলে তোর তিন নয়নরাস্তা জুড়ে খড়গ হাতেদাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন। সেই কবিতাকে কটাক্ষ করেই অনুব্রত বলেন,মিথ্যাবাদী কবি আমি নই।'
গত বিধানসভা ভোটে অনুব্রত মণ্ডল যে স্লোগান তুলেছিলেন, তা তো ভাইরাল হয়ে যায়। ‘খেলা হবে’ । এখন সেই অনুব্রত মণ্ডলই সিবিআইয়ের জালে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডলের এই মন্তব্য।