ভাস্কর মুখোপাধ্য়ায়, আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, বীরভূম : বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করে এসেছে বিজেপি আসলে ওয়াশিং মেশিন। অন্য় দলে থাকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত, আর তাঁরাই বিজেপিতে যোগ দিলে সব তদন্ত থেমে গিয়ে, ধোয়া তুলসীপাতা! আর এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার বীরভূমের ইলামবাজারের খোলা মঞ্চ থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অনুপম হাজরা যা বললেন, তা কি কার্যত বিরোধীদের অভিযোগকেই মান্য়তা দেওয়া নয়? প্রশ্ন সকলেরই। 


এদিন বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক, অনুপম হাজরা বলেন, ' এখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আছেন, যাঁদের যাঁদের মনে হচ্ছে যে, তাঁরা রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন, একটা সিগারেট তিনবার খেতেন, একটা বিড়ি তিনবার খেতেন, এখন বড় বড় স্করপিও গাড়ি চড়ছেন, হাতে মোটা মোটা সোনার চেন, গলায় যেভাবে একেবারে গরুকে যেভাবে চেন বাঁধে, সেরকম সোনার চেন। যাঁদের মনে হচ্ছে যে ইডি, সিবিআই আসতে পারে, তাঁদের খোলা মঞ্চে আহ্বান জানাই, যে চুরিটা আগে বন্ধ করুন। আর আমার ফেসবুকে, অনুপম হাজরা বলে যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে একটা নম্বরও দেওয়া আছে। যদি সামনে এসে বিজেপি জয়েন করব বলতে লজ্জা লাগে, কানে কানে এসে বলে যান। আমরা দেখব যে আপনাদেরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়।


তিনি আরও বলেন, ' যদি মনে হয়, আগে আমি দস্যু বাল্মিকী ছিলাম, এখন আমি সাধু হব, তাহলে বিজেপির রাস্তা খোলা আছে।' 


শিক্ষা থেকে পুর নিয়োগে দুর্নীতি, গরুপাচার থেকে কয়লা পাচার, রাজ্যের একাধিক মামলার তদন্ত করছে ইডি-সিবিআই। বিজেপি দাবি করছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের কোনও মতেই ছাড়া হবে না। এমনকি খোদ নরেন্দ্র মোদিও বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বলে দাবি করছেন, আর তাঁর দলেরই নেতা দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে যা বলছেন, তারপর কটাক্ষ করতে দেরি করেনি বিরোধীরা।


 এমনকী দলীয় মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দল তাঁর বক্তব্যের অনুমোদন দেয় না। এরপরই আবার অনুপম হাজরা সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, ' বিজেপির সংবিধানটা যাঁরা ভাল করে পড়েছেন, তাঁদের কাছে আমার একটা সরল প্রশ্ন,  রাজ্য়ের একজন Spokesperson বা রাজ্য় স্তরের যে কোনও নেতার কি পার্টির সর্বভারতীয় বা কেন্দ্রীয় সম্পাদকের বা যে কোনও কেন্দ্রীয় নেতার মন্তব্য়ের বা কাজের assessment করার বা বিরূপ মন্তব্য় করার এক্তিয়ার আছে কি? যদি কেউ মাঝে মাঝেই সেটা করে থাকেন, তাহলে আমি যতদূর জানি, সেটা বিজেপি সংবিধান বা প্রোটোকল বিরোধী আমি যেটুকু সংবিধান পড়েছি, তাতে এটা বলে একজন ন্য়াশনাল spoeksperson-এর সেই এক্তিয়ার রয়েছে, একজন রাজ্য়ের spoeksperson-এর নেই। ঠিক যেমনভাবে একজন OC-র একজন SP-র কাজকে অ্য়াসেসমেন্ট করার বা মন্তব্য় করার এক্তিয়ার নেই। যদি কিছু ভুল বলে থাকি, শুধরে দেবেন। 

সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স্তরের নতুন তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি। এই তালিকায় বাংলা থেকে একমাত্র জায়গা পেয়েছেন অনুপম হাজরা। দিলীপ ঘোষেরও এবার এই তালিকায় ঠাঁই হয়নি।  এহেন অনুপম হাজরারই মন্তব্য় ঘিরে এখন জোর বিতর্ক।