মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আবীর ইসলাম, শান্তিনিকেতন : চর্চার কেন্দ্রে থাকা শান্তিনিকেতনের 'অপা' আসলে অর্পিতারই। এবিপি আনন্দর হাতে এসেছে শান্তিনিকেতনের ‘অপা’-র দলিল। যেখানে নথিতে উল্লেখ, ২০১২ সালে কলকাতার বাসিন্দা শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকায় ২টি বাড়ি-সমেত ১০ কাঠার একটু বেশি এই জমিটি কেনা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) নামে।


শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি মৌজায় জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেখে বোলপুর ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের (Land And Land Reforms) আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২০ সালে শুধুমাত্র অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে ওই জমির মিউটেশন করানো হয়। এখনও সেই নামেই রয়েছে অপা নামে ওই বাড়ির মালিকানা। সেখানকার বিএলআরও স্বীকার করেছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামেই অপা-র মালিকানা থাকার কথা।


পার্থ-অর্পিতার যৌথ সম্পত্তি রয়েছে বলে দাবি করেছিল ইডি


ইডি-র তরফে আদালতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সূর্যপ্রকাশ ভি রাজু। তিনি জানান, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে অর্পিতার বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। এমনকি তল্লাশি অভিযানে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারির একটি দলিল মিলেছে, যা থেকে জানা গিয়েছে, তাঁরা দু’জনে মিলে একটি জমি কিনেছিলেন।


শুধু তাই নয়, পার্থ এবং অর্পিতার সম্পর্ক নিয়েও আদালতে মুখ খোলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। তাঁর দাবি, পার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অর্পিতা। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। দু’জনে নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও আদালতে যুক্তি দেন তিনি। এর পাল্টা পাল্টা পার্থর আইনজীবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি আমার জুনিয়রকে ফোন করতেই পারি। তার মানে এই নয় যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।’’ 



আরও পড়ুন- এবার ইডির নজরে ৩টি বাড়ি ও গেস্ট হাউস! 'মাঝে মধ্যেই আসতেন পার্থ', দাবি বাসিন্দাদের


এসএসসি দুর্নীতি তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মেলে। টালিগঞ্জে ডায়মন্ড সিটি সাউথের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে এখনও পর্যন্ত ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। পরে বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ২৮ কোটি টাকা। খোঁজ মেলে আরও একাধিক ফ্ল্যাটের। বাজেয়াপ্ত করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার গয়না ও প্রায় বহু মূল্যের বিদেশি মুদ্রা। কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় অর্পিতার অনেক ফ্ল্যাটের হদিশ মিলেছে। জমি-বাড়ির দলিল বাজেয়াপ্ত করেন ইডি-র আধিকারিকরা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে শিক্ষা দফতরের খাম। ইডি-র দাবি, পার্থ ও অর্পিতা, দু’জনের বাড়ি থেকেই যৌথ নামে বেশ কিছু নথি মিলেছে। এর কারণ জানতে চান ইডি-র তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে দাবি, পার্থর সঙ্গে অর্পিতার ঘনিষ্ঠতা বছর দশেক ধরে। এর মধ্যে আর্থিক লেনদেন, নামে-বেনামে সম্পত্তি, যৌথ সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। ইডি সূত্রে খবর, অর্পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৩টি ডায়েরিতে সাঙ্কেতিক ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে। সেগুলির অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।এছাড়া, উদ্ধার হয়েছে ৩৭টি ফাইল ফোল্ডার, সেখানে প্রায় ২৬০০ পাতার নথিতে কী রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন ইডি অফিসারকে।