নান্টু পাল, নলহাটি : হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে নিয়োগপত্র পেয়ে  চাকরিতে যোগদান করলেন ক্যানসার আক্রান্ত নলহাটির সোমা দাস (Soma Das)। আজ সকালে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে নলহাটি (Nalhati) মধুরা হাইস্কুলে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর মেয়ে চাকরি পাওয়ায় খুশি বাবা মা।


সোমা বলেন, আজ চার বছর পর আমি চাকরিতে যোগ দিলাম। খুব ভাল লাগছে। কিন্তু আমার যে সঙ্গীরা আছেন, তাঁরাও যদি আজ কাজে যোগ দিতে পারতেন তাহলে এই আনন্দটা আজ পরিপূর্ণ হত। আনন্দ হচ্ছে, কিন্তু সেটা পরিপূর্ণ নই। আমি ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার সঙ্গীদের হয়ে প্রচার করব। এছাড়া যখনই সময় পাব ধর্মতলায় গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেব।


আরও পড়ুন ; সময়সীমা ৭ দিন, ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে অবিলম্বে চাকরি দিতে নির্দেশ


দিনকয়েক আগেই আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থী সোমা দাসকে ৭ দিনের মধ্যে সহকারী শিক্ষকের চাকরি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব। পাশাপাশি অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টও দিতে বলা হয়। দীর্ঘদিন গাঁধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান, বিক্ষোভ চলছে এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের। তাঁদেরই একজন বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা সোমা দাস। ক্যানসার আক্রান্ত এই চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন। 


কে এই সোমা ?


২০১৯ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে সোমার। কিন্তু সঙ্গতি নেই চিকিৎসার বিরাট খরচ বহন করার। তার মধ্যেই কষ্ট করে চলে চিকিৎসা। এই পরিস্থিতিতেই কিছুটা সুস্থ হয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে কলকাতা চলে আসেন সোমা। ক্যানসারের যন্ত্রণা ঢেকেই আন্দোলন শুরু করেন। 


চাকরি না পেলে কীভাবে চিকিৎসা হবে সোমার ? সম্প্রতি এই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিবকে সোমা দাসের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। বলেন, ‘আন্দোলনকারী ক্যানসার আক্রান্তকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ করা যায় কি না। প্রয়োজনে রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি বলেন, চিকিৎসার জন্য সোমা দাসের ১৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। চাকরি না পেলে কীভাবে চিকিৎসা হবে সোমার ?


৩৫০-এরও বেশি দিন ধরে SSC-র আন্দোলন করেন বীরভূমের নলহাটির সোমা দাস। তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। কর্কটরোগের কামড় সত্ত্বেও কোনও বিশেষ সুবিধে নিতে চাননি তিনি। সংবাদমাধ্যমে ছবি দেখে সোমা দাসকে ডেকে পাঠান বিচারপতি । তিনি এও বলেন, প্রয়োজনে তিনি অন্যত্র চাকরির বন্দোবস্তও করে দেবেন সোমাকে। তবে মানা করে দেন সোমা, তিনি বলেন ‘শিক্ষক হওয়াটাই স্বপ্ন, জীবনের সঙ্গে লড়ছি, এটাও লড়ব’। সোমা জানিয়ে দেন, তাঁর একার নিয়োগের দরকার নেই। তাঁর সঙ্গে এত দিন ধরে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সকলেরই চাকরি পাওয়া দরকার।