গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: মোড়ল বাড়ির পুজো নামে পরিচিত বীরভূমে নানুরের হাটসেরান্দী গ্রামের পুজোর বয়স এবার ৭৯ বছর। বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির পুজো এটি। পূর্ব পুরুষরা পাশের গ্রামের পূজোর প্রচলন শুরু করলেও, এই গ্রামের পুজোর বয়স এবার ৭৯ বছর বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। অনুব্রত মণ্ডলের দাদুর বাবা গৌরহরি মন্ডল এই পুজো প্রচলন করেছিলেন নানুরের বঙ্গছত্র গ্রামে।


প্রায় ২০০ বছর আগে সেই পুজোর প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে সেখানেও পুজো হয় এখনও। পরবর্তী কালে পরিবারের সদস্যরা পাশের গ্রামে এসে বসবাস শুরু করলে সেখানে ও নতুন করে শুরু হয় দুর্গাপুজো করা। এখানকার পুজোতে নেই কোনও বলিদান প্রথা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্য পুজোর সময় এসে উপস্থিত হন গ্রামের বাড়িতে। পুজো কয়েকদিন বাড়িতে আসেন অনুব্রত মণ্ডলও। পুজো কয়েকদিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান একসঙ্গে ও একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করেন। পুজো আর দেরি নেই, তাই পরিষ্কার পরিছন্ন করার কাজ শুরু হয়ে গেছে মোড়ল বাড়িতে। মন্দিরের চারিদিকে চলছে রং করার পালা। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পর সারা বছর এখানে থাকা একটি পিতলের দুর্গা মূর্তি নিয়েই চলে নিত্য পুজো।


 শারদীয়া উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। পুজোর প্রস্তুতিতে কোমর বাঁধছে উদ্যোক্তা থেকে বনেদি বাড়িগুলো। তালিকায় রয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িও। এবার ১২৬ বছরে পদার্পণ করবে এই পুজো। শোনা যায়, ১৮৯৫ সালে লাভপুরের মিরাটি গ্রামে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পিতামহ জঙ্গল মুখোপাধ্যায়।


পরিবারের একজনকে সরাসরি পুজোয় সামিল হতেই হবে, শুরু থেকে চলছে এই রীতি। সেই প্রথা মেনেই প্রতিবছর এই পুজোয় অংশ নিতেন খোদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। পুজোর সমস্ত কাজ থেকে মন্ত্র ও চণ্ডীপাঠ, নিজেই করতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। কখনও দেশের অর্থমন্ত্রী কখনও বিদেশ মন্ত্রী, কখনও বা বাণিজ্যমন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতি হয়েও শত কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও শিকড়ের টানে বার বার ফিরে এসেছেন গ্রামের বাড়ির এই পুজোয়। প্রতিবছর মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর আড়ম্বর ছিল দেখার মতোই।


স্থানীয়দের কাছেও মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো এক অন্য অনুভূতি। প্রতিবার নিয়ম মেনে মহাষষ্ঠীর দিন দুপুর নাগাদ দিল্লি থেকে মিরাটির এই বাড়িতে এসে পৌঁছতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পুজোর আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের আনাগোনা। কড়া নিরাপত্তা বলয় থাকত বাড়ির চারপাশে।  দিল্লি থেকে ফিরেই পুজোয় বসতেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।