গোপাল চট্টোপাধ্যায়, খরুন (বীরভূম) : দেবীপক্ষের শুরুতেই নিরঞ্জন দিয়ে শুরু হয় খরুনের রায় পরিবারের পুজো। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে এমনটাই রীতি চলে আসছে বীরভূমের খরুন গ্রামের রায় পরিবারে।


‘খরুন-বেলিয়া-চাকপাড়া, মধ্যিখানে মা তারা’। তারাপীঠ মন্দিরের আশপাশে যে গ্রামগুলি রয়েছে তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রাম হল খরুন। গ্রামে সবক'টি পুজোই হচ্ছে পাঁচ বংশের সাবেকি পুজো। সব বাড়ির পুজো শুরু হয় রায় বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপ থেকে। ৩৫০ বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে।


আরও পড়ুন ; দেবীর নেই দশহাত-অস্ত্র, নেই মহিষাসুর, 'অভয়া' মূর্তিতে পূজিত হন বীরভূমের এই দুর্গা


পুজোর সূচনা করেন তৎকালীন জমিদার রামনিধি রায় ও রামকানাই রায়। প্রথম দিকে মাটির তৈরি সাবেকি মূর্তি গড়া হত। কথিত আছে, কোনও এক সময় মা দুর্গাকে এক কুমারী সন্ধ্যা দেখাতে গিয়ে আর ফেরেননি। এরপর মা দুর্গার মুখে শাড়ির লাল পার দেখে মনে করা হয়েছিল, ওই কুমারীকে ভক্ষণ করেছেন। সেই থেকেই মাটির মূর্তি গড়া বন্ধ। তারপর থেকেই শুরু হয় পটের তৈরি প্রতিমা। প্রতিমা তৈরিতে মাটির ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।


আরও পড়ুন ; বাড়ির পুজোয় নিজেই চণ্ডীপাঠ করতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, মৃত্যুতে জৌলুসহীন মিরাটির পুজো


পুজো কমিটির বর্তমান কর্মকর্তারা বলেন, “এই পুজো প্রতিপদে ঘট ভরা এবং বলিদান দিয়ে শুরু হয়। চতুর্থীর দিন পুণ্যবারি আনা হয়। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় অন্য চার বাড়ির প্রতিনিধির সঙ্গে সমবেতভাবে নবপত্রিকা বাঁধা হয় রায় বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে বসেই। সপ্তমীর সকালে দোলা এনে বন্দনার পর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। সন্ধিতে সাদা ছাগ বলি দেওয়া হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত রায় পরিবারের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। কারণ, ওই তিন দিন পরিবারের তিন শতাধিক সদস্য একসঙ্গে বসে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন। প্রাচীন রীতি মেনে এখানে পটের প্রতিমা এক বছর রেখে দেওয়া হয়। সারা বছর ধরে চলে পুজো। দেবী পক্ষের শুরুতে সেই প্রতিমা গ্রামের দিঘিতে নিরঞ্জন দিয়ে পুনরায় মাকে আহ্বান করা হয়।"