ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: এবার কীর্ণাহার থানার ওসি-র বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ। পুলিশ সুপারের কাছে সরাসরি অভিযোগ কীর্ণাহারের দুই পরিবারের। বাড়ি করার জন্য একজনের থেকে ১ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ। অপরজনকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি। কীর্ণাহার থানার ওসি-র বিরুদ্ধে বীরভূমের SP-র কাছে অভিযোগ দুই পরিবারের। এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি কীর্ণাহার থানার ওসি আশরাফুল শেখ।


বাড়ি করতে গিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝামেলা।  সুযোগ বুঝে বাড়ির মালিকের কাছে কীর্নাহার থানার ওসি আসরাফুল শেখ বাড়ির মালিকের কাছে এক লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগ। দিতে না পাড়ায় বাড়ির মালিককে একদিন এবং একরাত আটকে রাখা হয় থানায়। এমনকি টাকা দিতে না পারার জন্য বাড়ির মালিকে পেটানোর অভিযোগ। পরে চাপে পড়ে  ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা। ১০ হাজার টাকা ওসিকে দিয়েছেন বাড়ির মালিক। বাকি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


 এদিকে এই পরিস্থিতি বাড়ির মালিকের স্ত্রী "দিদিকে বলো" তে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেই উপর থাকে চাপ আসতেই গত শনিবার বোলপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রকি আগরওয়াল বাড়ির মালিককে  বোলপুরে তার অফিসে ডেকে পাঠান। বাড়ির মালিক জানান,এসডিপিও  প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন  টাকা ফেরত দেওয়ার। বাড়ি করা নিয়ে ঝামেলার ঘটনায় একই ভাবে বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধের স্ত্রী ছবি দাস। জেলা পুলিশ সুপারকে করা অভিযোগ ছবি দাস অভিযোগ করেছেন। 
 
অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত শনিবার দিন ২৬ অক্টোবর সকালে তার স্বামী  সোমা দাস (পুরুষ ৭০ বছর ) কে কোনও নোটিশ ছাড়া  কীর্ণাহার থানার ওসি আশরাফুল শেখের নির্দেশে আমাদের বসত বাড়ি  কীর্ণাহার জয়ন্তিপুর কলোনি, দিঘলডাঙ্গা থেকে পুলিশ এসে তুলে নিয়ে যায়। স্বামীকে কীর্ণাহার থানায় সারাদিন অভুক্ত অবস্থায় বসিয়ে রেখে, বলে তোমাকে ৫০০০ টাকা দিতে হবে। না হলে গারদে ভরে দেব। আমি একজন দরিদ্র, দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারের মহিলা। এমত অবস্থায় আমার স্বামীকে কীর্ণাহার থানার বড় বাবু শ্রী আশরাফুল শেখ মহাশয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপনার কাছে আমার কাতর নিবেদন রাখছি। উনি যে কোনও সময়ে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করবেন। উনি বহু ব্যাক্তিদের ভয় দেখিয়ে, নানা রকমের অত্যাচার করে টাকা আদায় করছেন। 


এদিকে কীর্নাহার থানার ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দোতলা বাড়ি করছেন। একতলা থেকে দোতলা করার সময় তার প্রতিবেশী বাধা দেয় এবং কোটে কেস করে। ইনজাংশন জারি হয়। কিন্তু দূর্গা পুজোর সময় রবীন্দ্রনাথ প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে বাড়ির কাজ শুরু করে। কিন্তু তার অভিযোগ, কীর্ণাহার থানার ওসি সপ্তমীর দিন (১০ অক্টোবর) তাকে প্রথম ডেকে পাঠায়। অভিযোগ তাঁর কাছে  ওই দিনই প্রথম এক লক্ষ টাকার দাবি করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলা হয়। ওই টাকা দিতে পারবে না বললে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরে রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে আবার লক্ষ্মী পুজোর দিন অর্থাৎ (১৬ অক্টোবর) তারিখে ডাকা হয় থানায়। ওসি তাঁকে  ঘরে ঢুকিয়ে পেটায় এবং বলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তার জন্য তাকে একদিন একরাত থান্য আটকে রাখা হয়। তারপর বলে ৪০ হাজার টাকা দে, না হলে কেস দিয়ে দেব। তার ২০ হাজার টাকায় রাজি হলাম। ওই দিন রাতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি। বাকি টাকা বৃহস্পতিবার দেওয়ার কথা ছিল।


আরও পড়ুন, তৃণমূলের ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার হয়ে তন্ময় ভট্টাচার্য TMC-র ঝান্ডা ধরবেন : শুভেন্দু


এদিকে স্বামীকে আটকে রাখার পর তার স্ত্রী ১৭ অক্টোবর সকাল ১০ নাগাদ  "দিদিকে বলো" নম্বরে ফোন করেন।  এরপর বৃহস্পতিবার  বোলপুর এসডিপিও অফিস থেকে ফোন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে এবং বোলপুর এসডিপিও অফিসে শুক্রবার আসার জন্য ডাকা হয়। এসডিপিও কে সব জানোর পর তিনি প্রতিশ্রুতি দেন পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার। এদিকে এই ঘটনার পর সোমবার সিউড়িতে এসপি অফিসে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কীর্ণাহার থানার ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।