ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, তারাপীঠ : আশ্বিনের শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব দিবস ৷ কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় জয় দত্ত স্বপ্নে তারা মায়ের নির্দেশ পান, চতুর্দশীতে শ্মশানের শ্বেত শিমুল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নীচে মায়ের শিলামূর্তি আছে। সেই মূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো আজও তারাপীঠে (Tarapith) বিশেষ পুজোর(Special Puja) আয়োজন করা হয়েছে।


এদিন সূর্যোদয়ের আগে ভোর ৩ টে নাগাদ মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মায়ের বিগ্রহ বের করে আনা হয়। বিরাম মঞ্চে তাঁর ছোট বোন মুলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দিরের অভিমুখে পশ্চিম দিকে বসানো হয়। জীবিত কুণ্ডু থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর পরানো হয় রাজবেশ। এরপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে মঙ্গল আরতি পর্ব!


ভোরের আলো ফুটতেই ধীরে ধীরে মন্দির চত্বরে জমতে শুরু করে ভক্তদের ! সারা বছরের মধ্যে আজকের দিনেই তারা মাকে এক পলক ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পান ভক্তরা ! ভক্তরা মাকে স্পর্শ করে পুজো দেন। দিনভর বিরামমঞ্চে থাকার পর বিকেলে আরতির পর মাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরে। স্নানের পর নবরুপে সাজানো হয় দেবী মূর্তিকে।


রীতি অনুযায়ী, মায়ের আজ উপোস ! এদিন মায়ের মধ্যাহ্ন ভোগ হয় না। দিনভর তাই ফল-মিষ্টিই খান মা। মহাভোগ তোলা থাকে রাতের জন্য! সকালে মঙ্গলারতির পর লুচি, মিষ্টি, সুজি দিয়ে দেওয়া হয় শীতল ভোগ। রাতে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, মাছ-মাংস দিয়ে করা হয় ভোগ নিবেদন।


এর আগে গত মাসে ১৪ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্যায় (Kaushiki Amavasya)। তারাপীঠে (Tarapith) তারা মায়ের (Tara Maa) বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। ভোরবেলা মঙ্গলারতি দিয়ে পুজোর সূচনা করা হয়। মঙ্গলারতির পর পাঁচরকম ফল, পাঁচরকম মিষ্টি, ক্ষীর দিয়ে দেওয়া হয় শীতল ভোগ। মায়ের শিলামূর্তিকে স্নান করানোর পর পরানো হয় রাজবেশ।                                                                                                                                       


কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে পুজো দেওয়া হয়। সকালে মন্দিরে যান বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ও রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের নামে তারা মায়ের কাছে পুজো দেন তিনি। 


কথিত আছে, এই দিনই তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাখ্যাপা। তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূলতলায় সাধনা করেছিলেন তিনি। ভক্তকে দেখা দেন মা তারা। সেই থেকে পালিত হয় কৌশিকী অমাবস্যা। অনেকে আবার এই তিথিকে বলেন কৌশী অমাবস্যা। যে কোনও শুভ কাজে ব্যবহৃত হয় কুশ। এই দিনে সেই কুশ কাটা হয়। তাই একে কৌশী অমাবস্যাও বলে।