ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, লাভপুর : তাঁর কলম কলা বলত। সমাজের বিভিন্ন দিক অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর রচনায়। কথাসাহিত্যিক হিসাবে তাঁর স্থান বাংলা সাহিত্যে একেবারে প্রথম সারিতে। এহেন প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমের লাভপুরে যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার অবস্থা আজ ভগ্নপ্রায়। ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্য সরকার এই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু, তার পরেও বাড়িটির সেভাবে কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ।


তারাশঙ্করের পরিবারের সদস্য ও পর্যটকদের আশঙ্কা, এই বাড়িটিকে অবিলম্বে সংস্কার না করা হলে অচিরেই তা ধ্বংস হয়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে তাঁর জন্মভিটে ও  আঁতুড়ঘর। ২০০ বছরেরও বেশি পুরানো এই মাটির বাড়িটি আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না পরিবারের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতিকে জানানো হয়েছে। তারা বাড়িটিকে অধিগ্রহণ করে সংস্কার করুক, এমনই দাবি উঠেছে। যদিও তাদের তরফ থেকে বারবার প্রশাসনকে অধিগ্রহণ করার জন্য আবেদন করা হলেও, কী কারণে তা এখনও সম্ভব হচ্ছে না তা জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তবে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকখানা "ধাত্রী দেবতা"-র কিছু সংস্কার করা হয়েছে।


প্রয়াত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তারাঁ চেয়েছেন সরকার অবিলম্বে এটি হস্তান্তর করুক। যেহেতু এটি মাটির বাড়ি, তাই ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সংস্কার করা হোক। তা না হলে শীঘ্র তা ধ্বংস হয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না এই বাড়ির কথা।  


এদিকে প্রতিদিন পর্যটকরা আসেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভিটে ও বৈঠকখানা পরিদর্শন করতে। ভিটেবাড়ি এবং আঁতুড়ঘরের অবস্থা দেখে তাঁরাও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, হয়তো এই বাড়িটি যে কোনও সময় ভেঙে পড়বে। ধ্বংস হয়ে যাবে একটা ইতিহাস। 


লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ জানান, আইনি জটিলতা ও হস্তান্তরের জন্যই সংরক্ষণের কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে তিনি আশা করেন, খুব শীঘ্রই জটিলতা কাটিয়ে সংরক্ষণের কাজ করা সম্ভব হবে।


অন্যতম সেরা বাঙালি কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রহসন রচনা করেছেন। তারাশঙ্কর ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার ও ১৯৫৬ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৭ সালে 'গণদেবতা' উপন্যাসের জন্য 'জ্ঞানপীঠ' পুরস্কার পান। এছাড়া ১৯৬২ সালে তিনি 'পদ্মশ্রী' এবং ১৯৬৮ সালে 'পদ্মভূষণ' সম্মান অর্জন করেন।