মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবীর ইসলাম ও নান্টু পাল, বীরভূম: রামপুরহাটে (Rampurhat) ভয়ঙ্কর হত্যালীলা। তৃণমূলের (TMC) উপ প্রধান খুনের পর, একের পর এক বাড়িতে আগুন। এই ঘটনায়, শিশু-মহিলা-সহ মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। কী হয়েছিল গতকাল রাতে? ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আক্রান্তরা।


কী বলছেন আক্রান্তরা?


অগ্নিকাণ্ডে জখম নাজিমা বিবি জানিয়েছেন, আমরা ১০ ছিলাম। ২টো বাচ্চা ছিল। ৫-৬টা মেয়ে, ১-২টো বড় মেয়ে ছিল, দরজা আমরাই বন্ধ করেছিলাম, গ্রিলে তালা দিয়েছিলাম, বোম ফেলেছে। আগুন মারবে তা জানি না গো, না হলে পালাতাম।


অগ্নিকাণ্ডে জখম নাজিমা বিবির কথায়, 'আমরা ঘরের ভিতরে ছিলাম, মধ্যে খানে দোকান আছে। বাইরে ছিলাম, বোম পরে দেখে, দোকানে ঢুকে গেলাম, শাটার আছে, বোমের ছিটা লাগবে না বলে, ঘর জ্বালিয়ে দিল, পেট্রোল ছিটিয়ে। কাপড় ছিল, পেট্রোল দিয়ে, আগুন দিয়ে দিল। হু হু করে জ্বলতে একেবারে দোকান-সব পুড়ে গেল।'


দোষী কারা?


বীরভূমের বুকে হত্যালীলা। নরসংহার। তৃণমূলের উপ প্রধান খুনের পর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। একের পর এক বাড়িতে আগুন। ভস্মীভূত বাড়ি। জীবন্ত দগ্ধ শিশু-মহিলা। ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা? কারা লাগাল আগুন? কেন ফিরে এল সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি?


ঠিক কী হয়েছিল ? 


সোমবার বীরভূমের রামপুরহাটের বকটুই গ্রামে খুন হল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ! তারপরই শুরু হয় তাণ্ডব। আগুন লাগানো হয় একের পর এক বাড়িতে। তৃণমূলের উপ প্রধান খুনে অভিযুক্ত সোনা শেখের আত্মীয়র বাড়িতে ধরিয়ে দেওয়া আগুন।


জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ৮ জনের। বেঘোরে প্রাণ হারান নিরীহ মহিলা-শিশু। মৃতদের আত্মীয় খুশি খাতুন জানিয়েছেন, আমরা সবাই ঘরে ছিলাম, পেট্রোল এনে ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আমি বেঁচে গেলাম, আমার বোন-ভাই বেঁচে আছি। আমার ছোট ছোট ভাই-বোন সব মারা গেছে। আমাদের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই, খালি আমার কাকী ও মা বেঁচে আছে, আরা তো মরমর অবস্থা।


একের পর এক উদ্ধার হয় ঝলসানো দেহ। রামপুরহাট দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক আজিজুল হকের কথায়, কাল রাতে ধরুন ৩ খানা, আজকে অনডিউটিতে ৭খানা পেয়েছি, টোটাল সাত আর রাতে ৩, সব মিলিয়ে নয় ধরুন,বাকিগুলো বলতে পারব না, বডি একেবারে পেস্ট হয়ে গেছে।


ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা? বকটুই কি হয়ে উঠল ‘বদলাপুর’? মৃতদের আত্মীয় খুশি খাতুন আরও বলছেন, এসব বাপ্পা-রোহন এরা করেছে, ন’টার সময়। আমাদের পরিবারের সবাই মারা গেছে। পুলিশ না ছাই, ভাদু কে কে না কে মেরেছে। আমাদের বলছে, আমরা মেরেছি। আমাদের ১২ জন মারা গেছে।


আরও পড়ুন: Rampurhat Fire: রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে 'নিখোঁজ' দগ্ধ প্রত্যক্ষদর্শী নাবালক


সব মিলিয়ে বীরভূমের বুকে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি। এই ঘটনায় এখনও অবধি বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।