উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সঞ্চয়ন মিত্র ও রুমা পাল: রামপুরহাটের গণহত্যা মনে করিয়ে দিয়েছে, সুচপুর এবং ছোট আঙারিয়ার ঘটনা। দু’দশক আগে সেই সব ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এখন রামপুরহাটের ঘটনা ঘিরেও তোলপাড় পড়ে গেছে রাজ্য রাজনীতিতে। 


বাড়িতে আগুন। পুড়িয়ে গণহত্যার অভিযোগ। রাজনৈতিক উত্তাপ। রামপুরহাটকাণ্ড ফিরিয়ে আনল একুশ বছর আগের স্মৃতি। মঙ্গলবার রামপুরহাটের পোড়া বাড়ি থেকে যখন একটার পর একটা দগ্ধ মৃতদেহ বার করা হচ্ছে। তখন সেই ছবি দেখে অনেকেরই মনে পড়ে গেছে ছোট আঙারিয়ার কথা।


সেটা ছিল ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূলকর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে, গুলি করে, পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। রাজ্যে তখন ক্ষমতায় সিপিএম সরকার। ছোট আঙারিয়ার ঘটনায় তারা সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। 


কিন্তু, বিরোধী দল তৃণমূল দাবি জানায়, তদন্ত করাতে হবে সিবিআই-কে দিয়ে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে, সিবিআই তদন্তে সিলমোহর দেয় রাজ্য সরকার। ২০০৯ সালে মেদিনীপুরের আদালত তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ৮ CPM নেতাকে বেকসুর খালাস করে। বিচারক জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে সিবিআই উপযুক্ত প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি। সেই দীর্ঘ মামলার মূল সাক্ষী বক্তার মণ্ডল গত মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। 


কিন্তু, গণহত্যা মামলার বিচার আজও চলছে। রামপুরহাটকাণ্ডের পর বিরোধীদের মুখেও উঠে এসেছে ছোট আঙারিয়ার প্রসঙ্গ। 


ছোট আঙারিয়ার আগে এই বীরভূমেই ঘটে গেছিল ভয়াবহ আরেক গণহত্যার ঘটনা। ২০০০ সালের ২৭ জুলাই নানুরের সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরকে খুনের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। ৮১ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। 


২০১০ সালের নভেম্বরে নানুর জোনাল কমিটির সদস্য নিত্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৪৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সিউড়ি জেলা আদালত। তাদের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৬ মে তাঁদের মধ্যে ১৯ জনকে বেকসুর খালাস করে কলকাতা হাইকোর্ট। দু’দশক পর সেই বীরভূমেই আবার উঠল গণহত্যার অভিযোগ। আবারও উত্তাল হল রাজ্য রাজনীতি।