গোপাল চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদবাজার(বীরভূম) : নির্জন স্থানের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কুলে নদী। রয়েছে বড় বড় বেশ কয়েকটি পাথর। তার মাঝে বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ। আর তার নীচেই শিলামূর্তি। এলাকার মানুষ এই মূর্তিটিকে পুজো করেন দুর্গা হিসেবেই। তবে এলাকার মানুষের কাছে দেবী পরিচিত পলাশবাসিনী রূপে। বহু বছর ধরে বন জঙ্গলে ঘেরা এই নির্জন জায়গায় পূজিত মা পলাশবাসিনী। 


দুর্গাপুজোর সময় চারদিন ধরে চণ্ডীর মন্ত্রে পুজো করা হয় পলাশবাসিনীর। দশমীর দিন ধুমধাম সবচেয়ে বেশি হয়। মহম্মদবাজারে ফুল্লাইপুর গ্রামের পাশে এই জায়গাটিতে চার বছর আগে মন্দির গড়ে তোলার চেষ্টা হলেও পলাশবাসিনীদেবীর স্বপ্নাদেশে তা বন্ধ করতে হয়। দেবীরূপী শিলার মাথায় তাই কোনও আচ্ছাদন নেই। তৈরি করা হয়েছে আটচালা, ভোগের মন্দিরও।


দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরের সেবাইত আছেন বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ মনসুর চক্রবর্তী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। একদিন দেবী স্বপ্নে জানান আমি বনচারিণী। পাথরের তেল সিঁদুর মাখানো শিলামূর্তিতে আমি পলাশবাসিনী। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে পাথরের গায়ে বাঘের পায়ের ছাপ, সেটা আমার। আমি এখানে বিরাজ করি। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে ৩০০ মিটার দূরে পাথরের গায়ে যে ছাপ রয়েছে বর্তমানে এখানকার মানুষ সেটাই দেবীর বলে মনে করেন। এমন অনেক গল্পকথা ছড়িয়ে আছে এলাকা জুড়ে। শিলা মূর্তির পিছনেই রয়েছে বড় কয়েকটা পাথর। আর সেখানে পাথরের ফাঁকে দুটি বাঘ থাকত। পুজোর সময় মন্দিরের সামনে এসে বসত। বাঘ দুটি জঙ্গলে ঘুরেও বেড়াত। ৬৫ বছর আগে একদিন একটা বাঘকে গুলি করে মেরে ফেলেন কুলকুড়ি গ্রামের এক ব্যক্তি এবং অন্য একটি বাঘকে চরিচার জঙ্গলে আদিবাসীরা মেরে ফেলে। তারপর বাঘ দুটির ছোট দুটি দুধের বাচ্চাকে তখন সেবাইত তুলে দেন তৎকালীন জেলাশাসকের হাতে। তখন সিউড়িতে এসেছিল একটি সাকার্সের দল। জেলাশাসক ওই বাচ্চা দুটি সাকার্সের রিং মাস্টারকে প্রতিপালনের জন্য দেন। 


আরও পড়ুন ; বিশ্বভারতীর অধ্যাপকের তৈরি ৩ কুইন্টাল ওজনের ধাতব দুর্গা পাড়ি দেবে ওড়িশা


বর্তমানে ৭৫ ছুঁয়েছেন দীর্ঘদিনের সেবাইত বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। এখন বাস করেন সিউড়ির এস পি মোড়ে। সপ্তাহে মঙ্গল ও শনিবার পুজো হয়। বয়সের কারণে আসতে পারেন না মাঝেমধ্যে। তাই এখন এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর ভাই পলাশ চক্রবর্তী ও ভাগ্নে অনিন্দিত বন্দোপাধ্যায়। মা পলাশবাসিনী তলার কয়েক কিমি দূরে দ্বারবাসিনীতলা। জনশ্রুতি আছে যে, পলাশবাসিনী ও দ্বারবাসিনী দুই বোন। পলাশবাসিনী বড় ও দ্বারবাসিনী ছোট বলে প্রচলিত এলাকায়। দেবী দুর্গারই অন্য রূপ। তাই দুর্গাপুজোর নিয়ম মেনে চারদিন ধরেই পূজিত হন পলাশবাসিনী। দশমীর দিনে হয় মূল উৎসব। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা। বসে একদিনের গ্রামীণ মেলাও।