গোপাল চট্টোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন : বিশ্বভারতীর অধ্যাপকের তৈরি ধাতব দুর্গা রওনা দেবে ওড়িশায়। নিজের শিল্পসত্ত্বা দিয়ে ধাতব দুর্গা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও মুখ উজ্জ্বল করলেন শিল্প সদনের অধ্যাপক শিল্পী আশিস ঘোষ। মহালয়ার দিন আট ফুট উচ্চতা ও আট ফুট চওড়া বিশিষ্ট এই ধাতব দুর্গা মূর্তি পাড়ি দেবে ওড়িশার ঝাড়সুকদার উদ্দেশে।
শান্তিনিকেতনের গোয়ালপাড়ার কোপাই নদী পেরিয়ে গ্রামীণ আবহে লুপ্তপ্রায় বাংলার গ্রামীণ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে উদ্ভাবনী ভাবনার জন্য পরিচিত ফার্নিচার-ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক আশিস ঘোষ ও তাঁর স্টুডিও মৃত্তিকা।
মেদিনীপুরের কেশপুর থেকে এসে পড়াশোনা করেন বিশ্বভারতীর শিল্প সদন ও কলাভবনে। ২০০১ সালে মাস্টার ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন তিনি। কলাভবনে মাস্টারমশাই হিসেবে পেয়েছেন যোগেন চৌধুরী, কেজি শুব্রমনিয়াম প্রমুখকে। শিল্পী হিসেবে তাঁর উল্লেখযোগ্য সাফল্য- ২০০৪ সালে গ্রিস অলিম্পিকে একমাত্র ভারতীয় শিল্পী হিসেবে ওপেন কম্পিটিশনে ক্রাইসিস থিম নিয়ে কাজ করার সুযোগ, ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে ৪০ ফুটের পাখির বাসা তৈরি করে স্বর্ণপদক পান তিনি। এছাড়াও ইংল্যান্ড, আমেরিকা, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ইতালি প্রভৃতি দেশে ভারতীয় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে কাজ করে তাক লাগিয়েছেন। তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে জিন্দাল গ্রুপ তাঁকে আর্টিস্ট অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কারে সম্মানিত করে।
আরও পড়ুন ; বীরভূমে কীর্ণাহারের রায় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস আজও অমলিন
লুপ্তপ্রায় শিল্পকে নতুন আঙ্গিকে রূপ দিতে সহশিল্পীদের নিয়ে গত দু'মাস ধরে তৈরি করছেন এই ধাতব দুর্গা মূর্তি। মূলত কপার ও ব্রাস দিয়ে এই ধাতব মূর্তিটি গড়ে তোলা হয়েছে। করোনা আবহে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় শিল্পী ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন পড়ুয়াদের একত্রিত করে দশ জন শিল্পীকে নিয়ে আশিসবাবু এই মূর্তি তৈরি করেন।
দেবী পরিহিত পিতলের গয়না প্রস্তুত করেছেন জয়দেবের টিকরবেতা গ্রামের শিল্পী হারু মহদরি। ধাতব মূর্তিটির ওজন প্রায় তিন কুইন্টাল। নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকা। শিল্পীর ভাবনায় স্থান পেয়েছে মা দুর্গা, মহিষাসুর ও সিংহ। আধুনিক যুগে ধাতু শিল্প প্রায় লুপ্তপ্রায়। তারই মাঝে এই শিল্পকর্ম হারিয়ে যাওয়া শিল্প ও শিল্পীদের উৎসাহিত করবে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আশিস ঘোষ বলেন, একদিকে স্থানীয় শিল্পীদের উপার্জন, অন্যদিকে শিল্পসত্ত্বা- এই দু'য়ের মেলবন্ধনে ভারসাম্য বজায় থাকছে জীবন ও জীবিকার। এর ফলে রক্ষা পাচ্ছে বাংলার লুপ্তপ্রায় হারিয়ে যাওয়া শিল্প-সংস্কৃতি। আশিসবাবুর এই কাজে খুশি তাঁর সহকর্মী সহ ছাত্রছাত্রীরা।