গোপাল চট্টোপাধ্যায়, নানুর: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই এসেছে শরৎ। রাজ্যের সর্বত্র দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলছে। লালমাটির দেশ বীরভূমও ব্যতিক্রম নয়। এই জেলাতেও জোরকদমে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি।
বীরভূমের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি নানুরেও চলছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ পটের দুর্গাপুজো। নানুরের হাটসেরান্দী গ্রামে সাতটি দুর্গাপুজো হয় পটের। এই গ্রামে মোট দুর্গাপুজোর সংখ্যা ১৯টি। তার মধ্যে সাতটি পটের। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই প্রথা। গ্রামবাসীরা সবাই এই পুজোয় যোগ দেন। ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য সবাই এগিয়ে আসেন।
হাটসেরান্দী গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই গ্রামের মানুষজন অতীতে অত্যন্ত গরিব ছিলেন। তাঁদের পক্ষে মূর্তি এনে পুজো করা সম্ভব হত না। সেই কারণে কোনওরকমে পটচিত্রের মধ্যে দুর্গা প্রতিমার রূপ দান করে চলত পুজো। সেই প্রথা চলে আসছে কয়েকশো বছর ধরে। এখন এই গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা কেউ বদলাতে চান না।
এই গ্রামে এরকম পটে দুর্গাপুজোর সংখ্যা সাতটি। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে মূর্তিপূজক অঘট পুজোর পাশাপাশি রয়েছে এই পট পুজোর প্রচলন। গ্রামের প্রতিটি পট পুজোর জন্য রয়েছে স্থায়ী মন্দির। একচালা কাঠামোর মধ্যে মাটি দিয়ে রং করে তার ওপর তুলির টান দিয়ে তুলে ধরা হয় দুর্গা প্রতিমার রূপ। তবে পট পুজো হলেও পুজোর রীতিনীতি ও আয়োজনের কোনও ঘাটতি থাকে না। পুজোর সমস্ত আচার-বিধি মেনে চারদিন ধরে চলে পুজো। তারপর বিসর্জন করা হয় এই পট পুজোর প্রতিমাকে।
এই গ্রামে পট পুজোর পাশাপাশি রয়েছে ৯টি মূর্তি পুজো ও তিনটি ঘট পুজো। গ্রামে প্রতিটি মন্দিরের পাশেই রয়েছে শিবমন্দির। গ্রামের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে রয়েছে ১০৭টি শিব মন্দির।
এই গ্রামেই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি। সেখানেও হয় দুর্গাপুজো। অনুব্রতর বাড়ির পুজোও নানুরের অন্যতম আকর্ষণ।