ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, সিউড়ি : অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ঘনিষ্ঠ বিকাশ রায়চৌধুরীর বদলে আগেই জেলা সভাধিপতি করা হয়েছে কাজল শেখকে (Kajal Seikh)। এবার কি বীরভূম জেলা পরিষদে কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ কর্মাধ্যক্ষদের সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেল ? নাম ঘোষণার পরও, কর্মাধ্যক্ষের পদে থাকতে চান না বলে দুই নেতার চিঠি দেওয়ার পরই শুরু হল জল্পনা। যদিও এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
একসময়ে বীরভূমের বেতাজ বাদশা, অনুব্রত মণ্ডল গরুপাচার মামলায় বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি ! তাহলে এবার কি লালমাটির জেলায় তৃণমূলের ব্যাটন চলে যাচ্ছে অনুব্রত-বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত কাজল শেখের হাতে ? সম্প্রতি বীরভূম জেলা পরিষদে একের পর এক অনুব্রত-অনুগামীর সরে যাওয়ার পর এখন এই প্রশ্নই জোরালভাবে উঠতে শুরু করেছে ! তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য ও সভাধিপতি কাজল শেখ অবশ্য বলছেন, "নতুনরা চান্স পাবে না, পুরনোরাই থেকে যাবে ? যে কাজ করবে, সেই স্থান পাবে। নতুন পুরাতন বলে কিছু নয়।"
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর, জেলায় ধাপে ধাপে গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত কাজল শেখের ! প্রথমে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটি, তারপর জেলা পরিষদের প্রার্থী। প্রথমবার জয়ের পরই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ! কাজলের আগমনে সরানো হয়েছে দু'বারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীকে। এছাড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদে অনুব্রত-অনুগামী বলে পরিচিত নারায়ণ হালদার ও আদিবাসী নেতা রবি মুর্মুর নাম ঘোষণার পরও, তাঁরা চিঠি দিয়ে সেই পদে না থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন !
অন্যদিকে, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় গোষ্ঠীর বলে পরিচিত নুরুল ইসলামের !
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বীরভূমের রাজনীতিতে কাজল শেখের উত্থানই কি তাহলে অনুব্রত মণ্ডলের পতনের শুরু ?যদিও এমনটা মানতে নারাজ খোদ বীরভূমের জেলা সভাধিপতি ও তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। তিনি বলছেন, "কে বলল ? কে বলল অনুব্রতর টিম বাদ গেছে ? অনুব্রত মণ্ডল মহাশয়ের টিমই বিভিন্ন জায়গায় ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে, তাঁরাই প্রতিযোগিতা করেছেন, তাঁরাই ভোট করেছেন, তাঁরাই সামনে আছেন। বীরভূম জেলার অভিভাবক আছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে বীরভূম জেলা চলছে। টিম অনুব্রত ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট করেছে। আগামীদিনে তাঁদের নেতৃত্বেই চলবে।"
কাজল শেখ যখন এ কথা বলছেন তখন, বীরভূম জেলায় দুয়ারে সরকারের একাধিক কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে কাজল শেখের ছবি। কিন্তু কয়েক বছর আগেও, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বড় করে ছবি থাকত অনুব্রতর ! এই পরিস্থিতিতে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি
ধ্রুব সাহা বলেন, "দাদার ভক্ত হবে না ভাইজানের ভক্ত হবে, এই যে লড়াই, যত দিন যাবে তত সামনে আসবে। গুরুত্ব কাদের দেওয়া হবে, কাদের দেওয়া হবে না। নব্য আর পুরাতন। শুধুমাত্র এলেমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই। এই ব্যবস্থাই চলছে।"
পাল্টা বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "তারুণ্যের প্রভাব যে তৃণমূলকে বর্ধিষ্ণু করবে, সেটা দেখে বিরোধীপক্ষ ভয় পেয়ে উল্টো-পাল্টা কথা বলছেন। এই কথা বলার কোনও মানে হয় না । যে যাঁর জায়গায় আছেন, সেখানে সম্মানের সঙ্গে থাকবেন।"
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রত-হীন বীরভূমে কোনও দাগই কাটতে পারেনি বিজেপি। সামনে ২৪-এর মহারণ ! বোলপুর ও বীরভূম, জেলার দুটি লোকসভাই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। সেখানে কি বিজেপি প্রভাব ফেলতে পারবে? সেটাই দেখার।