অর্ণব মুখোপাধ্যায়, বগটুই: সিবিআই তদন্তের মাঝেই সাঁইথিয়ার বাতাসপুরে বগটুইকাণ্ডে স্বজনহারাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সকালে জলখাবারে দেওয়া হয় লুচি, আলুর তরকারি আর রসগোল্লা। মধ্যাহ্নভোজের মেনুতে রয়েছে ভাত-ডাল, আলুপোস্ত, মাছ-মাংস। 


এদিকে রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আজ থেকে বয়ান রেকর্ড করার প্রক্রিয়া শুরু করবে সিবিআই। প্রথমে যাবে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি এক নাবালক ও তিন মহিলা। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁদের কাছে ঘটনার দিনের কথা জানতে চাওয়া হবে। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের ভূমিকা কী ছিল তাও জানতে চাইবেন তদন্তকারীরা। এরপর সাঁইথিয়ার বাতাসপুরে যাওয়ার সম্ভাবনা সিবিআইয়ের। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মিহিলাল শেখ-সহ স্বজনহারা বেশ কয়েকটি পরিবার।তাঁদের বয়ান রেকর্ড করবে সিবিআই। ওই রাতে কী ঘটেছিল? এবং আনারুলের ভূমিকা কী ছিল? তা জানতে চাওয়া হবে। খবর সিবিআই সূত্রে।


অন্যদিকে, পুলিশের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চাইল সিবিআই। ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজ চাইল সিবিআই। গ্রামবাসীদের দেখিয়ে দুষ্কৃতীদের শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হবে বলে সূত্রের খবর। 


এরই মধ্যে, রামপুরহাটকাণ্ডে তদন্তকারী সিবিআই অফিসারদের জন্য এবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাঠানো হল এক প্ল্যাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাহিনীতে থাকছেন ৩৫ জন সিআরপিএফ জওয়ান। সূত্রের খবর, রামপুরহাটকাণ্ডের তদন্তকারী সিবিআই অফিসারদের সঙ্গেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের জন্য আলাদা ব্যারাক তৈরি করা হচ্ছে। 


সোমবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে? কখন খুন হয়েছিলেন তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ? এরপর আগুন লাগানোর ঘটনা কখন ঘটে? সেইসময় পুলিশ কোথায় ছিল? কতক্ষণ পরে তারা পৌঁছেছিল ঘটনাস্থলে? সেখানে পৌঁছে পুলিশ কী করেছিল? রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের এই সমস্ত তথ্যই আছে সিবিআই-কে দেওয়া পুলিশের এফআইআরে। এবিপি আনন্দর হাতে সেই এফআইআরের প্রতিলিপি। 


এফআইআরে উল্লেখ, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ বোমাবাজিতে আহত হন পুলিশ জানতে পারে। ৮টা ৫০-এ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ৯টা ৩৫-এ রামপুরহাট থানার ডিউটি অফিসার বগটুইয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের জানান, গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত ১০টা ৫-এ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। অর্থাৎ ১ কিলোমিটার পথ পেরোতে আধঘণ্টা সময় লাগে পুলিশের। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৮টি বাড়ি জ্বলছে। পুলিশের তরফে দমকলকে খবর দেওয়া হয়। রাত ১০টা ২৫-এ গ্রামে আসে দমকলের ২টি ইঞ্জিন। চারজনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আগুন নিভিয়ে রাত ২টোয় চলে যায় দমকল। আগুন নিভলেও প্রচণ্ড তাপের কারণে কোনও বাড়িতেই ঢোকেননি দমকল কর্মীরা। পরদিন সকাল ৭টা ১০-এ ফের উদ্ধারকাজ শুরু করে দমকল। একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৭টি ঝলসানো দেহ। তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর তাঁর অনুগামী ও সঙ্গীরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে, পরিবারগুলিকে পুড়িয়ে মারার জন্য আগুন লাগিয়ে দেয়। সিবিআইকে দেওয়া পুলিশের এফআইআরে উল্লেখ।