প্রকাশ সিনহা, সন্দীপ সরকার ও রাজীব চৌধুরী , রামপুরহাট : তৃণমূলের উপপ্রধান খুনের পর, তাঁর লোকেরাই গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এমনটাই দাবি করলেন, বগটুই হত্যাকাণ্ডের (Bogtui Violence) অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী (Eyewitness) ও ধৃত সঞ্জু শেখের পিসি। পুলিশের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
পরিবারের ৭ সদস্যকে হারিয়েছেন। তৃণমূলের উপপ্রধানকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ভাইপো। বুধবার ভাইপোকে দেখতে এসেছিলেন রামপুরহাট আদালতে। সেখানেই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন বগটুই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ধৃত সঞ্জু শেখের পিসি। তৃণমূলের নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের লোকেরাই গ্রামে হামলা চালিয়েছে, আগুন ধরিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন ; ফেরারদের খোঁজে তল্লাশিতে বগটুই গ্রামের পাঁচ জায়গায় CBI’র গোয়েন্দারা
একাধিক প্রশ্নের উত্তরে ধৃত সঞ্জু শেখের আত্মীয় হাসিনা যা জানালেন...
প্রশ্ন : সঞ্জু কি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ?
হাসিনা জানান, না। সঞ্জু ছিল না।
প্রশ্ন : আগুন কে লাগিয়েছিল ? হাসিনা জানান, ভাদুর লোকেরা।
প্রশ্ন : ভাদুর লোকেরা বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল?
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। বোমা ফাটাচ্ছিল। আমি বাসস্ট্যান্ডের বাড়িতে ছিলাম। বোমা ফাটায় থরথর করছিলাম। তখন বাড়িতে আমরা সব বউ, বাচ্চা ৫টা। বোমা ফাটছে। আমাদেরও পুড়িয়ে দেবে হয়ত।
প্রশ্ন : ভাদুর লোকেরা কারা কারা ছিল?
হাসিনা বলেন, ভাদুর লোক বড় লালন, বাপ্পা, মফিজুল, মরতেজ। জানলা খুলে দেখলাম মারব মারব বলে। ভাদুর ঘরে কান্নাকাটি হচ্ছে। ৩টের আগে রামপুরহাটে বোমা পড়েছে। তখন আমরা থরথর করছি। আমার ভাইদের ঘরে বোমা পড়ছে। তখন আমরা খাটের তলায়
প্রশ্ন : বোমা কারা মারছে?
হাসিনা বলেন, এই ভাদুর লোকেরা।
প্রশ্ন : কারা কারা? নামগুলো একটু বলুন।
হাসিনা বলেন, মরতেজ, বড় লালন আগে, মফিজুল।
গ্রামে যখন তাণ্ডব চলছে একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে .তখনও পুলিশ গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন ধৃত সঞ্জু শেখের পিসি।
প্রশ্ন : তারপর কী হল? আগুন ধরিয়ে দিল?
হাসিনা বলেন, বোমা পড়ার পর দোতলায় উঠে দেখছি আগুন জ্বলছে। তখন আমরা সবাই মিলে...ঘরে ৫টা বাচ্চা ছিল। ৩ বউমা ছিল। সবাইকে নিয়ে আমি মায়ের গ্রামে চলে গেছিলাম। সেখানে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : পুলিশ কী বলল?
হাসিনা বলেন, জিজ্ঞেস করল এখানে কেন এসেছিলেন। আমি বললাম যে বোমা মারছে। আমরা ভয়ে কাঁদছি।
প্রশ্ন : পুলিশ গ্রামের ভিতরে ঢোকেনি ?
হাসিনা বলেন, পুলিশ ঢোকেনি। তাহলে আমার পরিবার বাঁচত। আমার ভাইয়ের পরিবার বাঁচত।
প্রশ্ন : পুলিশ ঢোকেনি কেন ?
হাসিনা বলেন, আনারুল আসতে দেয়নি। ভাদুর লোকেরা আসতে দেয়নি।
প্রশ্ন : আপনি কী করে জানলেন আনারুল আসতে দেয়নি ?
হাসিনা বলেন, ৮ বছর ধরে আমাদের ঝামেলা। ৮ বছর!
প্রশ্ন : আনারুলকে ফোন করা হয়েছিল যে পুলিশ পাঠাও?
হাসিনা বলেন, না। আমি ফোন করতে পারি না।
প্রশ্ন : অন্যরা করেছিল?
হাসিনা বলেন, কে করেছিল আমি জানি না।
রামপুরহাটকাণ্ডে বুধবার নলহাটি থানার IC মনোজ সিংহকে CBI ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পাশাপাশি, এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, রামপুরহাট থানার ASI সত্যেন্দ্রনাথ সাহা ও রঞ্জন দত্তকেও। সূত্রের খবর, হত্যাকাণ্ডের রাতে ঘটনাস্থলে এসে তাঁরা কী করেছিলেন? কী দেখেছিলেন? সেই বিষয়ে জানতে চায় CBI।