কৃষেন্দু অধিকারী, বোলপুর
: জমি-বির্তকে আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী, এবিপি আনন্দে (ABP Ananda Exclusive) মুখ খুললেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য (Visva Bharati VC Bidyut Chakraborty)। ''মুখ্যমন্ত্রী যা কাগজ দেখাচ্ছেন, তা ১৯৪৩ সালের আশুতোষ সেনের নথি। অর্মত্য সেন ভুল বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভুল বলছেন', জমি-বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে পাল্টা দাবি বিশ্বভারতীর উপাচার্যের।



  • মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলছেন, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন যা বলছেন সেটিই ঠিক।
    'অমর্ত্য় সেন যে তথ্য দিচ্ছেন সেটি অপ্রাসঙ্গিক। জমির লিজ ওঁর বাবার নামে যিনি গত হয়েছেন। ২০০৬ সালে জমিটির মিউটেশন হয়। মিউটেশনের জন্য বিঘাপ্রতি চার্জ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা হিসেবে ১ একর ২৫ ডেসিমেল জমির যে কর হয়, উনি সেই টাকাটা নিয়ে নথিপত্র করিয়েছিলেন। তা হলে এখানে ১ একর ৩৮ ডেসিমেলের গল্প এল কোথা থেকে? উনি তো ১ একর ৩৮ ডেসিমেলের পয়সা দেননি। তা হলে অমর্ত্য সেন যে দাবি করছেন তার কোনও নথি বা ভিত্তি নেই। এখন মুখ্যমন্ত্রী যে কাগজ দিয়েছেন সেটি ১৯৪৩ সালের। সেখানে আশুতোষ সেনের নথি করা রয়েছে। সেই নথির ভিত্তিতে উনি বলছেন, অমর্ত্য সেনকে এই জমিটি দেওয়া হয়েছে। 

  • ২০০৬-এ যে হস্তান্তর হয়েছে...
    রাজ্য সরকার কি সেই কাগজ দেখাতে পারবে? হস্তান্তর হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ১৯৪৩ সালের নথি দেখাচ্ছেন কেন? তা হলে ২০০৬ সালের নথি দেখাবেন। আমাদের বিশ্বভারতীর নথি অনুযায়ী ২০০৬ সালে মিউটেশন করেছি এবং তার জন্য উনি করবাবদ সরকারকে ১৮ হাজার ৯৪০ টাকা দিয়েছেন। এখানে ১ একর ৩৮ ডেসিমেলের গল্প এল কোথা থেকে? নথির দিক থেকে অর্মত্য সেনও ভুল বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভুল বলছেন। কিন্তু আমাদের বিশ্বভারতীর তরফ থেকে যা বলেছি, সেই দাবিতে আমরা আজও অনড়। 

  • অনেকে বলছেন, আপনি অধ্য়াপক অমর্ত্য় সেনকে অপমান করছেন। 
    আমি অমর্ত্য সেনকে সম্মান করি। ওঁর যে অবদান সেটির আমি যথেষ্ট আদর করি। উনি আমাকে অনেক ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে শিখিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে আমার একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বভারতীয় সম্পদ রক্ষা করা সেই দায়িত্বের মধ্য়ে পড়ে। সেই সম্পদ রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ করতে হবে, করব। সেখানে ভগবান এলেও আমি নিজেকে আটকাব না। কারণ বিশ্বভারতীর জমি কব্জা হয়ে যাচ্ছে। অমর্ত্য সেনও কিন্তু একজন জবরদখলকারী। এবং এখানে অমর্ত্য সেন ছাড়াও অনেক কেউকেটা রয়েছেন যাঁরা জমি জবরদখল করে বসে রয়েছেন। যদি তাঁদের নাম বলি, হইচই পড়ে যাবে।

  • এত জমি যেখানে বেহাত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে অমর্ত্য সেনকে নিশানা করা কেন?
    আমি এখানে ২০১৮ সালে যোগ দিয়েছি। তখন আমাদের ৭৭ একর জমি জবরদখল ছিল। গত চার বছরে ১৫ একর জমি উদ্ধার করেছি। এখনও ৬২ একর দখল রয়েছে। তার মধ্যে ১৩ ডেসিমেল জায়গা অমর্ত্য সেনের।

  • নাম না করে উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মুখ্য়মন্ত্রী...
    আমি উপাচার্য হয়েছি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্য়মে। তাছাড়া আমাকে নিয়োগ করেছেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি। এখানে কোনও অযোগ্যতার প্রশ্ন আসে না। এটা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কোনও বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্য নই। আমি কিন্তু কারও ব্যক্তিগত পছন্দে আসিনি। উনি যদি যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তা হলে রাষ্ট্রপতিকে অভিযোগ করুন। 

  • আপনি গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ...
    কোনও উদাহরণ আছে কি? 

  • মুখ্য়মন্ত্রী বলে গিয়েছেন এর শেষ দেখে ছাড়বেন...
    আমিও এর শেষ দেখতে চাই। আমরা চিঠিতে অমর্ত্য সেনকে বলেছি, আপনি যদি জমি নিয়ে নিশ্চিত থাকেন তা হলে জরিপের ব্যবস্থা করুন। কারণ ভূমি রাজস্ব দফতর রাজ্য সরকারের। না হলে আলোচনায় আসুন। সেটা মেনে নেওয়ার মতো সৎ সাহস আমাদের রয়েছে। আইনি পদ্ধতিও নেওয়া যেতে পারে। কোর্টেও যাওয়া যেতে পারে। গত কাল আমার খুব হাসি পেয়েছে একটি বিষয়ে। এটা খুব লজ্জার যে জেড প্লাস সুরক্ষা দিতে চাইছে, বিশ্বভারতী কি এতটাই আতঙ্কের?...এই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় কিন্তু বিশ্বভারতীর রাস্তা নিয়ে নিয়েছিলেন। আমি অনুরোধ করেছিলাম, এটা নেবেন না। এটা নিলে বিশ্বভারতী থাকবে না। আমি করজোরে অনুরোধ করছি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে, এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার আগে একটু নথিপত্র দেখে নিন। প্রমাণ দেখে নিন।


আরও পড়ুন:'এমন ভারত হোক যাতে দারিদ্র থাকবে না', বাজেট অভিভাষণে আহ্বান রাষ্ট্রপতির