শান্তিনিকেতন: মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata Banerjee) বীরভূম সফরের মধ্য়েই, বিশ্বভারতী (Visva-Bharati University) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর সংঘাত ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। বুধবার বোলপুরের সভা থেকে বিশ্বভারতী ইস্য়ুতে ফের মুখ খোলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। আর তার কয়েকঘণ্টার মধ্য়েই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, পাল্টা সুর চড়ায় বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ।


সুর চড়াল বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ: আরও চড়ল রাজ্য় সরকার এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সংঘাতের পারদ। বুধবার বোলপুরে দাঁড়িয়ে ফের বিশ্বভারতী নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্য়মন্ত্রী। আর এদিনই বেনজিরভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, মুখ্য়মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যেখানে কটাক্ষের সুরে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্য়মন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। কারণ তাঁকে তাঁর স্তাবকরা যা শোনান, তিনি তাই বিশ্বাস করেন, এবং টিপ্পনি করেন।’


নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য় সেনের জমি-বিতর্কের মধ্য়েই সোমবার তাঁর শান্তিনিকেতনের বাসভবনে যান মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। প্রথমে সেখান থেকে তারপর মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর শিক্ষক, পড়ুয়াদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করে নাম না বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্যকে নিশানা করেছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেউ ক্ষমতার বুলডোজার চালালে আমি ছাত্রদের সঙ্গে আছি। পুঁথি পড়ে সব জানা যা না। ঘটনা শুনলাম, কাম্য় নয়। কারও কারও মস্তিষ্কে হৃদয় নেই। জুলুম করছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। ভবিষ্য়তে পথ দেখাবে। ক্ষমতার জোরে বুলডোজার চালালে আমি সঙ্গে আছি।’’

২৪ ঘণ্টার মধ্য়েই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাল্টা সুর চড়াল বিশ্বভারতী। যেখানে বলা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি তিনি বোলপুরের রাঙাবিতানে বিশ্বভারতীর একজন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, পাঁচজন ছাত্র এবং একজন গবেষণারতা ছাত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এদের সাথে কথা বলে, তিনি বিশ্বভারতীর সম্বন্ধে বেশ কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য় করেছেন জনসমক্ষে। বিশ্বভারতীতে এখন ৪৭৩ জন শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এবং ৭৫০ জন কর্মচারী বন্ধু আছেন। তার মধ্য়ে একজন শিক্ষকের বক্তব্য় শুনে এবং ছয়জন ছাত্র-ছাত্রীর বক্তব্য় শুনে তিনি বিশ্ববিদ্য়ালয়কে আক্রমণ করলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ তিনি কান দিয়ে দেখেন।





প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষে সই রয়েছে মহুয়া বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের। যিনি বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক। মুখ্য়মন্ত্রীকে আক্রমণ করতে গিয়ে, বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি, গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ অবধি টেনে এনেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মাননীয়াকে অনুরোধ করব, যে কান দিয়ে না দেখে, বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে। কী করে হল? কারণ আপনি স্তাবকদের কথা শুনে, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত। আপনার প্রিয় শিষ্য়, যাকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারতেন না, তিনিও জেলে। কবে বেরোবেন, কেউ জানে না। আগে সাবধান করলে আপনি দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন। অবশ্য আপনি যদি সত্য়ি অর্থে মানুষের মুখ্য়মন্ত্রী হন, তাহলে এই কথাটা আপনার বোধগম্য় হবে। আর যদি স্তাবক পরিবৃত থাকতে ভালবাসেন, তাহলে সামনে আরও বিপদের সম্মুখীন হবেন।’

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্য়ালয় বিশ্বভারতীর আচার্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বভারতী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন বুধবার হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের হালহকিকত জানিয়ে মোদীকে চিঠি লিখব।’’ অন্য়দিকে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও নরেন্দ্র মোদির প্রসঙ্গ টেনে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে,বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্য়ালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা, কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্য়স্ত। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলো যতটা ভাল হওয়া দরকার, এখন ঠিক তেমন কি আছে? ’


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মোমোর পর এবার চা, নিজের হাতে বানিয়ে দোকানদারকে খাওয়ালেন মুখ্যমন্ত্রী