শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা:  লোকসভা, বিধানসভা ভোটের আগে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন দল থেকে নেতৃস্থানীয়দের দলে আনছে বিজেপি। এবার ভাবনাটা আলাদা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে,  নেতা নয়, বিরোধী দলের কর্মীদের দলে আনতে চায় বিজেপি। তবে তাঁদের সৎ বলে পরিচিত হতে হবে। সম্প্রতি দলের যে প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে, তাতে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্ম শিবির। পাশাপাশি দুর্নীতির মতো বিষয় নিয়েও কড়া ভাবে তৃণমূলতে নিশানা করার নির্দেশ দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।


সব ঠিক থাকলে আগামী বছরেই পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজবে। তার আগে ফের বঙ্গ রাজনীতিতে দলবদলের ছবি? এমন জল্পনা ছড়িয়েছে বিজেপির সিদ্ধান্তে। কারণ, সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলবদলের জন্য ফের দরজা খুলে দিচ্ছে বিজেপি। তবে থাকছে বেশ কিছু শর্তও। নেতা নয়, বিরোধী দলের সৎ কর্মীদের দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে গেরুয়া শিবির।


রাজ্য বিজেপি সভাপতির দাবি:
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমরা বিরোধী দলের কর্মী, সৎ যাঁরা, তাঁদের দলে চাই। তবে তৃণমূলের নেতাদের ব্যাপারে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তৃণমূলের অনেক সৎ কর্মীই নেতৃত্বের দিকে প্রশ্ন তুলছেন, আমরা চাই তাঁরা আমাদের পাশে আসুন।' যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।


এর আগেও দলবদল:
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার ঢল নেমেছিল। তৃণমূলের বহু নেতা-বিধায়ক-সাংসদ সেই সময় বিজেপিতে যান। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত।, সুনীল মণ্ডল। বিজেপিতে যোগ দেন রুদ্রনীল ঘোষ, শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, ২০২১ সালের প্রত্যাশামতো ফল করতে পারেনি বিজেপি। তখনই এই দলবদল নিয়ে বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন ওঠে। কেন এই নেতাদের নেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এদিকে ভোটের পরে বহু নেতা বিজেপি ছেড়ে ফিরে যান তৃণমূলে। তৃণমূলে ফেরেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সব্য়সাচী দত্ত।    


যদিও এরপরেও দরজা খোলা রাখছে বিজেপি। তবে তাঁদের মূল লক্ষ্য কর্মী। সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণ শিবিরে দলের নেতা ও কর্মীদের আচরণবিধি কড়া ভাবে মানার নির্দেশ দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এরইসঙ্গে বলা হয়েছে, লাগাতার জনসংযোগ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলীয় কর্মীদের সক্রিয়তা বাড়াতে হবে। দুর্নীতি ইস্যুতে কড়া ভাবে চেপে ধরতে হবে তৃণমূলকে। এরই মধ্যে বড় কর্মসূচি হিসেবে, ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। সুনীল বনশল নবান্ন অভিযানে থাকবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।


তৃণমূলের কটাক্ষ:
বৈদিক ভিলেজ রিসর্টে বঙ্গ বিজেপির ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরের শেষদিনে মূল বক্তা ছিলেন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। তবে এদিন ছিলেন না সদ্য বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল। মঙ্গলবারই চলে যান তিনি। এই প্রেক্ষাপটেই বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরকে নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। কুণাল ঘোষ, বলেন, 'চিন্তন শিবিরে যাঁরা যাননি, তাঁরা গুরুত্ব মানেন নি৷ গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা ভেতরে আছেন তাঁরা রসিকতা করে যা পাঠাচ্ছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে ভেঙে পড়েছে। রাজনৈতিক দলের এই পিকনিক মোচ্ছব হতে পারে না। রাজনৈতিক শিবির এর আগেও হয়েছে। এটা যদি স্পা আর সুইমিং পুল দিয়ে শুরু হয় সেটার রাজনৈতিক অভিমুখ থাকতে পারে না।'


আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর ধন্যবাদ মিছিল সরকারি টাকায় ফূর্তি! মমতাকে 'বোম্বাগড়ের রাজা' কটাক্ষ দিলীপের