কলকাতা: রাতেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আজ তোলা হল আদালতে। আর তাতেই শিয়ালদা আদালত চত্বরে ধুন্ধুমার বাধল। সেখানে দলীয় পতাকা হাতে কার্যত সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হল বিজেপি ও কংগ্রেস। উঠল স্লোগান, তার পাল্টা স্লোগান। পুলিশের তরফে যে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়। বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হলেও, দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। (Rakesh Singh Arrested)
গতকাল রাতেই ট্যাংরা এলাকা থেকে রাকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার দুপুরে শিয়ালদা কোর্টে তোলা হয় রাকেশকে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে পুলিশ আদালত চত্বরে পৌঁছতেই তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। দলীয় পতাকা হাতে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন কংগ্রেসের সমর্থকরা। বিজেপি সমর্থকরা হাজির হন পতাকা দলীয় ছাড়াই। গাড়ির ভিতর থেকে দলীয় সমর্থকদের দেখে দুই হাত তোলেন রাকেশ। (BJP leader Rakesh Singh Arrested)
আর এর পরই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। বিজেপি-র তরফে 'মোদি', 'মোদি' স্লোগান তোলা হয়। অভিযোগ করা হয়, এক প্যাকেট করে বিরিয়ানির লোভে জমায়েত করছেন কংগ্রেস সমর্থকরা। এর পাল্টা কংগ্রেসের তরফে তোলা হয় 'চোর' স্লোগান। কংগ্রেস সমর্থকরা একযোগে বলতে থাকেন, 'চোর চোর, ভোট চোর, গদ্দি ছোড়'। দুই তরফেই ব্যারিকেড ঠেলে এগনোর চেষ্টা হয়। পুলিশ আটকাতে গেলেও একটা সময় পর দুই দিকের ব্যারিকেডই ভেঙে ফেলা হয়।
এদিন বিজেপি সমর্থকরা দাবি করেন, রাকেশ নিজেই আত্মসমর্পণ করেন। অন্য় দিতে কংগ্রেস সমর্থকরা বলেন, "কাপুরুষের মতো লুকিয়ে ছিলেন। বীরপুরুষ হলে দিনের বেলা, সর্বসমক্ষে করতেন! পুলিশ বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে ধরে এনেছে। লজ্জা করে না! সব চোররা দাঁড়িয়ে। চোর...গদ্দি ছোড়।" আর এই নিয়েই উত্তেজনা ছড়াল শিয়ালদা আদালত চত্বরে। এদিন আদালত চত্বরে ছিলেন রাকেশের ছেলে এবং মেয়েও। ছেলে বলেন, "বন্ধুর বাড়িতেই পাঁচ দিন ধরে ছিলেন বাবা। কাল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পুলিশ...আমার বাবা ফোন অন করেছিল। ভাই জেলে। বাবা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। আমরা খাবার খাচ্ছিলাম। তখন পুলিশ আসে। ভিডিও আছে। বাবা যদি ভুল কাজ করে থাকেন, তাহল কংগ্রেসের মঞ্চ নিয়ে যে প্রধানমন্ত্রীকে গালি দেওয়া হল, সেটা কী?" রাকেশের মেয়ে বলেন, "আমরা জানি, বাবা মহান কাজ করেছে। আমরা ওঁকে নিয়ে গর্বিত। ন্যায়-অন্যায় আদালত ঠিক করবে।"
কলকাতার এন্টালিতে প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে তাণ্ডব চালানোর পাঁচ দিন পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন মূল অভিযুক্ত রাকেশ। গতকাল গভীর রাতে ট্যাংরার ফ্ল্যাট থেকে বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে, গ্রেফতার হন রাকেশ সিংহের ছেলে শিবম সিংহ। এই নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল পাঁচ। খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইনে রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। লালবাজারের সেন্ট্রাল লক আপে রাখা হয় বিজেপি নেতাকে। সেখান থেকেই আদালতে তোলা হয় তাঁকে।
সম্প্রতি বিহারে কংগ্রেসের সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করা হয়। কসেই নিয়ে গত শুক্রবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে দলবল নিয়ে তাণ্ডব চালান বিজেপি নেতা রাকেশ। সেই ঘটনায় তাঁর খোঁজ চললেও, এতদিন নাগাল পায়নি পুলিশ। বিজেপি নেতা পলাতক বলে পুলিশ দাবি করে। গত রবিবার ইডেন গার্ডেন্সের সামনে রাকেশকে খুঁজে পায় এবিপি আনন্দ। পুলিশ কেন তাঁর নাগাল পাচ্ছে না, সেই নিয়ে বিভিন্ন মহল সরব হয়। আর তার পরই গতকাল রাকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ।