রাজীব চৌধুরী, আশাবুল হোসেন ও অনির্বাণ বিশ্বাস : সোমবার নতুন দল ঘোষণা করতে চলেছেন হুমায়ুন কবীর। তার আগে শুক্রবার সুর আরও চড়ালেন তিনি। এতদিন ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে যে ৯০টি আসন দখলের কথা শোনা গেছিল হুমায়ুন কবীরের মুখে। এদিন সেঞ্চুরির টার্গেট বেঁধে দেন তিনি। হুমায়ুনের চ্য়ালেঞ্জে অবশ্য় গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।
বাবরি মসজিদের শিলান্য়াসের পর সোমবার নতুন দল ঘোষণা করতে চলেছেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ডেড ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তার আগে শুক্রবার সুর আরও চড়ালেন তিনি। হুমায়ুন বলেন, "দল ঘোষণা হবে। আগামী দিন ২০২৬-এর লক্ষ্য়ে এবং আমার একটাই মিশন গোটা রাজ্য়ের প্রশাসনের কাছে বার্তা বা শাসকদলের কাছে বার্তা তারা যে একচেটিয়া তিন তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে, মানুষের সঙ্গে যে ছল-চাতুরি, তোলাবাজি, দুর্নীতি, চাকরি বিক্রি করা সমস্ত কিছুর জবাব ওইদিন ওখান থেকে দেওয়া হবে শাসক দলকে।"
এতদিন ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে যে ৯০টি আসন দখলের কথা শোনা গেছিল হুমায়ুন কবীরের মুখে। এদিন সেঞ্চুরির টার্গেট বেঁধে দেন তিনি। সরাসরি বার্তা দেন মুসলিমদের উদ্দেশে। বলেন, "মুসলমান সমাজকে বাংলার আবেদন করব, যে এই যে বাবরি মসজিদের সম্বন্ধে তাদের যে আবেগ, তাদের ঝাঁ চকচকে মার্বেল দেওয়া মসজিদ থাকতেও এই যে মাঠের মধ্যে, জমির মধ্যে নামাজ পড়তে আসছে, তাদের কাছে একটাই বলব এই আবেগ ধরে রাখতে হবে। এবং ২০২৬-এর বিধানসভায় আমাদের পার্টিকে দু'হাত তুলে দোয়া করতে হবে, আশীর্বাদ করতে হবে। ১০০টা সিট আমাকে দিকে হবে।"
হুমায়ুনের চ্য়ালেঞ্জে অবশ্য় গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "কোনওদিন ৯০টা কোনওদিন ১৩০টা, ২৯৪টায় প্রার্থী দিন না ভাই। কে বারণ করেছে? আলোচনা তো হবে রেজাল্টের পর বিকেলে। বিজেপি গতবার তৃণমূল থেকে কয়েকজনকে নিয়ে গেছিল। চার্টার্ড ফ্লাইট এসেছিল নিয়ে যেতে। যারা চার্টার্ড ফ্লাইটে গিয়ে বলেছিল না এবার বিজেপি আসছে, তারা ভোটের পর দিদিকে ফোন করেছে যে চার্টার্ড ফ্লাইট দরকার নেই। দু'টো অটো পাঠাবেন? আমরা আবার ফিরে যাব।"
সোমবার দল গঠনের সভার জন্য বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল কলেজ মোড় এবং বিকল্প হিসাবে স্টেডিয়াম মাঠের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু, সেই সভা করতে প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি বলে তাঁর দাবি। শেষ অবধি প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের জমি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে সভা করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। শুক্রবার তাঁর দাবি, প্রশাসনের তরফে মিলেছে অনুমতি। হুমায়ুন বলেন, "মুর্শিদাবাদ জেলায় রেকর্ড সমাবেশ হবে। আজ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনও নেতা এত পরিমাণ লোক আপনারা দেখে নেবেন, ২২তারিখে। অনুমতি পেয়ে গেছি। মহকুমা শাসকের অনুমতিও পেয়ে গেছি। বেলডাঙা থানার IC-রও অনুমতি পেয়ে গেছি। এবং এত পরিমাণ লোক হবে মুর্শিদাবাদ জেলার স্বাধীনতার পর যে কোনও রাজনৈতিক দলের যে সভা সমিতি হয়েছে, সমস্তকে অতিক্রম করবে। রেকর্ড করবে।"
হুমায়ুন কবীর যখন নতুন দল ঘোষণার দিকে এগোচ্ছেন, তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তখন তাঁর সঙ্গে তৃণমূলেরই যোগসাজশের অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, "সবই স্পনসর্ড বাই মমতা ব্য়ানার্জি। ওদের দলের এখন যা অবস্থা, যারা ব্রাহ্মণ ওদের দলের ব্রাহ্মণ ব্য়ানার্জি, চ্যাটার্জি আছে, তারাও টুপি পরে চলে যাবে। অসুবিধা কোথায়? এখন থেকে অনেকে দাড়ি কামাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলব, বিশেষ আইন বা কোনওভাবে এসব লোককে সমাজ থেকে বাদ দিন। ট্য়াঁ-ফু করত না, যোগীর ছায়া পড়লে এদের টয়লেট বন্ধ হয়ে যেত। যোগীর মতন দরকার না, যোগীর ছায়াটা হলেও কাজ হয়ে যেত।"
কুণাল ঘোষ বলেন, "বিজেপি আর হুমায়ুনের মক-ফাইট। মক-ফাইট করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। ধর্মের ওপর দাঁড়িয়ে এই যুক্তি-তর্কগুলো হচ্ছে। আমরা সেগুলো চাই-ই না। বিজেপি ভোট ভাঙার জন্য এই খেলাগুলো খেলছে। আমাদের সোজা কথা, বিজেপিকে হারাতে গেলে প্রত্যেকটি ভোট আসতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসে।"
২২ তারিখ প্রস্তাবিত মসজিদস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে যেখানে সভা হবে, শুক্রবার সেখানে দেখা যায় প্রস্তুতি চলছে।