ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, শিবাশিস মৌলিক ও বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা : তিনিই একমেবাদ্বিতীয়ম। দল এবং সরকারে তাঁরই 'নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ'। বুধবার, CID-তে রদবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী কি ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন, দল হোক বা সরকার, শাসন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নবান্নই?
বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা বলেন, 'আগে তো দল ও সরকার কোথাও কোনও বিরোধ ছিল না। কারণ সবটাই মমতা ব্যানার্জি চালাত। সমস্যা হয়ে গেল অভিষেক এসে। দলে এসে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। ওর কোনও গুরুত্ব নেই। পিসি ওকে গুরুত্ব দেয় না। অযাচিত মন্তব্য করছিল। শেষকথা মমতাই। '
সম্প্রতি, কালীঘাটে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দলের সম্পূর্ণ রাশ এখনও তাঁরই হাতে রয়েছে। দলের শৃঙ্খলারক্ষায় তিনটি স্তরে যে কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তাতেও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতদের রমরমা। এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার ফের দলীয় বিধায়কদের পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেন,কে কী বলছেন, তা জানার দরকার নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই। তিনিই দলের চেয়ারপার্সন। শেষ কথা বলবেন।আর এর ২ দিনের মাথায় প্রশাসনেও বড়সড় রদবদল করলেন তিনি। ঠিক যা বলেছিলেন মাত্র ২ সপ্তাহ আছে।
মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন,'নিচু তলার কিছু অফিসার, কিছু কর্মী যাঁরা এই সরকারকে ভালবাসে না। এবং তোমার পুলিশেরও কিছু লোক তারা টাকা খেয়ে আজকে বালি চুরি বলো, কয়লা চুরি বলো, সিমেন্ট চুরি বলো...পলিটিক্যাল নেতাদের নামে সবাই বদনাম করে বেশি। পাঁচ টাকা খেলে ৫০০ টাকা বলে দেয় চোর।পলিটিক্যাল নেতারা টাকা খাওয়ার আগে ১০ বার ভাবে। জনগণের টাকা খাওয়া কি উচিত? তাদের নিজস্ব একটা দায়বদ্ধতাও থাকে। চুরি হলে তখন বলবে কয়লা চুরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর চুরি করবে CISF টাকা খেয়ে বা পুলিশের একাংশ টাকা খেয়ে আমি এটা বরদাস্ত করব না। যদি কোনও রাজনৈতিক দলের লোকও খায় তার কলার চেপে ধরো।'
বুধবার এই রদবদলের পর এক্স হ্যান্ডেলে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সম্প্রতি, এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল,তৃণমূলের অন্দরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ কয়েকটি সিদ্ধান্তে তা বোঝা যাচ্ছে। প্রিন্স অফ ক্যামাকস্ট্রিটের প্রভাবে পুলিশ বাহিনী এতদিন বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করত। প্রিন্সের ঘনিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকের বদলি এটা বুঝিয়ে দিল মুখ্যমন্ত্রী এখন গোটাটাই একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করবেন।প্রশাসন ও দল দুটোই। এরপরও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর কতটা প্রতীয়মান হবে? একই সুরে সমালোচনায় সরব হয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস।
সম্প্রতি, দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধেও দলের অন্দর থেকে সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আর কোনও রিস্ক না নিয়ে নিজের হাতেই দল ও প্রশাসনের লাগাম ধরতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রাজনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন, দলেরই একাংশের সমালোচনায় সৌগত রায় ! 'দায়বদ্ধতা না থাকার জন্যই..'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।