কলকাতা: ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন বা SIR নিয়ে তাড়াহুড়ো হচ্ছে বলে লাগাতার অভিযোগ সামনে আসছিল। বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তো বটেই, SIR-এর কাজে নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার, BLO-রাও নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্নায় বসেন। আর তার পরই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্যে খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটারতালিকা প্রকাশের দিনক্ষণ পিছনোর সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। যদিও বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেই বাংলায় SIR হওয়া উচিত ছিল বলে গোড়া থেকে দাবি করে আসছেন তাঁরা। (Sukanta Majumdar)
রবিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৬ ডিসেম্বর বাংলায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ফলত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দিনও পিছিয়ে গিয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে বাংলার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। রাজনৈতিক শিবির থেকে BLO, লাগাতার প্রশ্নের মুখে পড়েই শেষ পর্যন্ত কমিশন SIR-এর সময়সীমা বাড়াতে বাধ্য় হল কি না জল্পনা শুরু হয়েছে। (SIR in Bengal)
সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে সুকান্ত বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন দু'বছর সময় লাগে SIR করতে। তো দু'বছর সময় দেওয়া উচিত। আমরাও তো চাইছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মেনে দু'বছর করে দেওয়া হোক এবং রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে...যতদিন মেয়াদ আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন। তার পর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে SIR, ভোট যা করানোর করানো হতো। আমরাও তো সেই দাবি করছিলাম।"
কমিশন যেভাবে দিনক্ষণ পিছিয়ে দিল, তাতে BLO তো বটেই, তৃণমূলের দাবিও বৈধতা পেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। সুকান্তর বক্তব্য, "আমাদের কোনও অসুবিধে ছিল না। ওঁরা দু'বছর চেয়েছিলেন, এক সপ্তাহ বেড়েছে। এটাকে কতটা মানবেন, ওঁরা ভাববেন। আমাদের অসুবিধে নেই।" আগামী দিনে এই সময়সীমা কি আরও বাড়তে পারে? সুকান্ত বলেন, "সেটা কমিশন ঠিক করবে। EC ঠিক করবে, পিসি ঠিক করবে না। পিসির বিদায় হবে।"
অন্য দিকে, তৃণমূলের জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "বিজেপি-র নির্দেশে জাতীয় নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রস্তুতিহীনতার মধ্যে SIR শুরু করেছিলেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনা নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছিলেন। সেই নির্ঘন্টর তো আর কিছুই রইল না! প্রত্যেক দিন নতুন নিয়ম, নির্ঘণ্ট বদল হচ্ছে। তার মানে কোনও প্রস্তুতিই ছিল না! হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিজেপি বলেছে বলে গায়ের জোরে করতে হবে। এখন বুঝেছেন, নির্ঘণ্ট মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই সাত দিন করে সময় বাড়িয়েছেন। কিন্তু সাত দিন কি যথেষ্ট? আরও একটি বড় প্রশ্ন, আতঙ্কে, চাপে ৩৫ জন প্রাণ হারালেন। তার দায় কে নেবে? বিজেপি ও কমিশনের হাতে রক্ত থেকেই যাবে। কেন প্রস্তুতি ছাড়া এটা করা হল? সুকান্ত বলছেন, দু'বছরের কথা। তখন অটলবিহারি বাজপেয়ী ছিলেন। তিনিও বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আজ এমন কী হল যে বিজেপি জোর করল, এক মাসের মধ্যে SIR করতে হবে। যে কয়েকটি প্রাণ গিয়েছে, তার দায়িত্ব নিতে হবে কমিশন এবং বিজেপি-কে।"
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “নির্বাচন কমিশন কি নিজের অযোগ্যতা, অপদার্থতা স্বীকার করবে? ২৮ তারিখ কমিশনের সিইও দফতরে সর্বদল বৈঠকে আমিও ছিলাম। বৈঠকের পর বেরিয়ে প্রথমেই বলেছিলাম, চূড়ান্ত অপ্রস্তুতি। সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল। সব দায়িত্ব BLO-দের ঘাড়ে চাপিয়ে নাস্তানাবুদ করা হয়েছে তাঁদের। কেন বোঝেনি? কেন মানেনি? যেন সব BLO-দের কাজ! ঘন ঘন সার্কুলার. বিজ্ঞপ্তি বদলাচ্ছে। অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে কমিশন। তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক মনোভাবে চলতে গিয়ে এটা করেছে। নির্ভুল কাজ না করে, নাগরিকত্ব খুঁজতে গিয়েছে, যা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। ভুল রাজনৈতিক মনোভাব এবং বিজেপি-র কথায় চলতে গিয়ে আজ থুতু চাটতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিল। অযোগ্যতার কারণে একজন যোগ্যর নামও যদি বাদ যায়, কেউ ছেড়ে দেবে না। ভোটের অধিকার, মানুষের অস্তিত্বের অধিকার। তাকে নাগরিকত্বের সঙ্গে মিলিয়ে অসভ্যতা করতে গিয়েছে নির্বাচন কমিশন, বিজেপি-র কথায়। এতে তৃণমূল, বিজেপি-র লাভ হতে পারে…আমরা গোড়া থেকে বলেছিলাম, নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে। একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দেওয়া যাবে না।”
এদিন কমিশন জানিয়েছে, এনুমারেশন পিরিয়ড শেষ হবে ১১.১২.২৫-এ। রিঅ্যারেঞ্জমেন্ট অফ পোলিং স্টেশন্সের কাজ সম্পন্ন হবে ১১.১২.২৫-এ। আপডেশন অফ কন্ট্রোল টেবল এবং খসড়া ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে যথাক্রমে ১২ ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে ১৬ ডিসেম্বর। দাবিদাওয়া ও অভিযোগ জানানো যাবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই মতো শুনানি ও সিদ্ধান্তগ্রহণের কাজ শেষ করতে হবে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আগামী বছর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকার স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কমিশনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে । শেষে, ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে বাংলার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।