আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে অংশ নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেদিনই 'অপারেশন সিঁদুর' নিয়ে বিধানসভায় তুমুল বাগযুদ্ধে জড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপিকে ছদ্মবেশী হিন্দু বলে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক ইঞ্চি জায়গা দিইনি বলে সুর চড়ালেন শুভেন্দু অধিকারীও।

Continues below advertisement


প্রস্তাব আনা হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে সম্মান জানাতে। কিন্তু, শেষ অবধি তা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির ধুন্ধুমার বাগযুদ্ধের সাক্ষী থাকল বিধানসভা। বিদেশ ঘুরে আসা কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যেদিন নরেন্দ্র মোদির নৈশভোজে অংশ নিলেন, সেদিন বিধানসভায় তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোরে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে তুই-তোকারি--- বাদ গেল না কিছুই ! আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর সংঘাতের সুর তো চড়ল সপ্তমে ! বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, রাজনীতি করতে গিয়ে দেশকে বিক্রি করবেন না। হিন্দু ধর্ম, সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে। এটা স্বামী বিবেকানন্দর হিন্দু ধর্ম, রামকৃষ্ণদেবের হিন্দু ধর্ম, আপনারা ছদ্মবেশী হিন্দু। সবাইকে সম্মান করি। আপনাদের ইগনোর করি। 


পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীও জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, "আমরাও ওঁকে জবাব দিয়েছি। আমরাও ওঁকে জবাব দিয়েছি। আমরা ওঁকে এক ইঞ্চি জায়গা দিইনি। মোদিজিকে ছোট করবেন, অমিত শাহজিকে ব্য়ক্তিগত আক্রমণ করবেন। উনি নজরুল মঞ্চে গান গেয়ে দিয়েছেন- আমার যাওয়ার সময় হল, দাও বিদায়।"


বিধানসভায় বিজেপিকে নিশানা করে মুখ্য়মন্ত্রী আরও বলেন, অর্ধশিক্ষিত রাজনৈতিক দল। লজ্জা করে না ছিঃ! লজ্জা করে না ছিঃ। 


পাল্টা বিরোধী দলনেতা বলেন, "আমরা উঠে দাঁড়িয়ে ছিঃ মমতা, ছিঃ মমতা,  ছিঃ মমতা, ওঁর সামনে করেছি।"


মঙ্গলবার বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের মেরেছে। জঙ্গিরা কেন করেছে সেটা তারা বলতে পারবে। কিন্তু, যে চালক বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি মুসলিম। ফলে কেউ কেউ এই যুদ্ধকে হিন্দু এবং মুসলিমের হিসাবে চিহ্নিত করলে ভুল করা হবে।


রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন না, ব্রাত্য় বসুকে চন্দন দাস, হরগোবিন্দ দাস কেন মারা গেছে? কেন সেদিন বাড়িগুলো ভাঙা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে? কতদিন বোকা বানাবেন? এই বুদ্ধিজীবীরা ব্রাত্য বসুর মতো বুদ্ধিজীবীরা সমাজের টিবি, ক্যানসার।"


এরইমধ্য়ে, অধ্য়ক্ষের কাছে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব জমা দিয়েছে তৃণমূল। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাকিস্তান বা শাহবাজ শরিফ নিয়ে এদিন বিধানসভার ভিতরে কোনও বক্তব্য রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভা চত্বরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী পাকিস্তানের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাই এই স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব।


সব মিলিয়ে বিধানসভা উত্তাল ঘিরে নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত।