হাওড়া : বাংলাদেশ থেকে একের পর এক অনুপ্রবেশের চেষ্টার মধ্যেই ফের একবার রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে সরব হলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করলেন, "যেদিকে যাচ্ছে তাতে ২০৩১ সালের পরে আমাদেরও পালানোর রাস্তা খুঁজতে হবে, জায়গা খুঁজতে হবে।" হাওড়ার সভা থেকে এই মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে যে সীমাহীন তোষণ, তুষ্টিকরণের রাজনীতি চলছে এবং ডেমোগ্রাফি বদলে দিচ্ছে, সীমান্ত খোলা, রোহিঙ্গা মুসলমান ছেয়ে যাচ্ছে। এর নিরসন যদি না করতে পারি, তাহলে একটা সময় ১৯৬০ সালে আমার মা শ্রীমতি অধুনা গায়ত্রী অধিকারী, আগে গায়ত্রী ভট্টাচার্য ...তাঁর পিতৃদেব মাখনলাল ভট্টাচার্যর হাত ধরে ...শুধু হিন্দু হওয়ার কারণে এক কাপড়ে বরিশাল থেকে পালিয়ে এসেছিল...আর আমাদেরও যেদিকে যাচ্ছে...২০৩১ সালের পরে আমাদেরও পালানোর রাস্তা খুঁজতে হবে...জায়গা খুঁজতে হবে। "
বাংলাদেশ যখন অশান্ত, তখন ভারতের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অনুপ্রবেশ-সমস্য়া। গত বুধবারও উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকে বাংলাদেশের ২ নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃত আজমিরা খাতুন ও শিরিনা খাতুন যশোরের বাসিন্দা। মাসকয়েক আগে চোরাপথে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে ঢোকেন। এরপর পরিচারিকার কাজ নিয়ে পাড়ি দেন ভিনরাজ্যে। ফের চোরাপথে দেশে ফেরার জন্য বাগদায় এসে গ্রেফতার হন।
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে, BSF-এর অভিযানে ধরা পড়েন রাজশাহির ৩ বাসিন্দা। যাঁরা দক্ষিণ ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকেও সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় দুলাল শেখ ও পারুল বেগম নামে ২ জনকে গ্রেফতার করে বাগদা থানার পুলিশ। ধৃতরা ছিলেন বাংলাদেশের বাগেরহাটের বাসিন্দা। এবারও সেই বাগদা থেকেই গ্রেফতার হলেন আরও দুই মহিলা অনুপ্রবেশকারী।
শুধু অবশ্য় পশ্চিমবঙ্গ নয়, ওই মহারাষ্ট্রেও গ্রেফতার করা হয় অবৈধভাবে এপারে আসা ৪৩ জন বাংলাদেশিকে। মহারাষ্ট্র পুলিশের ATS অভিযান চালিয়ে তাদের পাকড়াও করে।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের সমস্য়া মাথাচাড়া দেওয়ায়, নতুন করে ‘বাংলাদেশ সেল’ ফিরিয়ে এনেছে দিল্লি পুলিশ। অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের খুঁজতে স্থানীয় থানাগুলির পুলিশকর্মী এবং অন্য আধিকারিকদের নিয়ে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এদিকে এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। 'একদিকে যখন বাংলাদেশি রোহিঙ্গাদের নিয়ে দিল্লি, অসম, ত্রিপুরা পুলিশ তৎপরতা দেখাচ্ছে, তখন বাংলায় তাদের অনুুপ্রবেশকে স্বাগত জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা'। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে গত মাসেই রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার পোস্ট, রাজধানী থেকে বাংলাদেশি রোহিঙ্গাদের তাড়াতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পাশাপাশি, অসম ও ত্রিপুরা পুলিশও অনুপ্রবেশকারীদের ধরছে। গত ৫ মাসে ৫৭০ জনের বেশি বাংলাদেশের নাগরিক ও ৬৩ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। অন্যদিকে, এ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর-হাকিমপুর সীমান্তের ভিডিওটি দেখুন, সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা প্রতিদিন অন্তত ১০০ জন অনুপ্রবেশকারীকে স্বাগত জানাচ্ছেন। যেখানে স্বরূপনগরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁটাতারহীন ৪২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যার ৩২ কিলোমিটার স্থল সীমানা আর ১০ কিলোমিটার নদী সীমানা। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁটাতার দেওয়ার জন্য জমি দিতে চাননি। এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট শুভেন্দু অধিকারীর।