কলকাতা : 'মা-মাটি-মানুষ'-এর সরকার এখন শুধু 'মাফিয়া-মাস্তান-মার্ডারার'-দের সরকারে পরিণত হয়েছে!' গুলশন কলোনিতে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় সরব হলেন বিরোধী দলনেতা। এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে তিনি লিখলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের গুলশান কলোনির মতো জায়গায় নিরাপদে ঠাঁই দিয়েছে। এদের নাম বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, দলে নিয়ে নিজেদের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করছে, আর সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে।"
কিন্তু কী হয়েছে গুলশন কলোনিতে ?
দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য়ের জেরে শিরোনামে কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড। গুলশন কলোনিতে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য় দেখা গেল। ধারালো অস্ত্র হাতে গুন্ডামি, বাইক, দোকান ভাঙচুর। সিসিটিভি ক্য়ামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি। স্থানীয়দের দাবি, কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায় দুষ্কৃতীরা। গতকাল সন্ধে ৭ টা নাগাদ বাইপাস সংলগ্ন গুলশন কলোনির অটো স্ট্য়ান্ড মোড়ে বাইক নিয়ে ঢুকে পড়ে জনাকয়েক দুষ্কৃতী। এরপরই শুরু হয় তাণ্ডব। এর আগে গত বছর ১৫ নভেম্বর এই ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে তাঁর বাড়ির সামনে গুলি করে খুনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গুলি না বেরোনয় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। সেই ঘটনার পর, ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডেই দেখা গেল এই ছবি। প্রশ্ন উঠছে EM বাইপাস থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কীভাবে তাণ্ডব চালাল দুষ্কৃতীরা ? কোথায় ছিল পুলিশের নজরদারি ?
গুলশন কলোনিতে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের নেপথ্য়ে এলাকা দখলের লড়াই ? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় সূত্রে খবর, একসময় এই এলাকা মিনি ফিরোজের দখলে ছিল। পুলিশের অনুমান, এলাকায় পুনরায় দখল নিতেই কাল সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হামলা চালান মিনি ফিরোজ সহ ন'জন। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন সাজিদ, মুস্তাফা, নুমান, ছোটা রাজা, শাহবাজ, মধু, সাজিদ, আহতারাম। তাদের মূল উদ্দেশ্য় ছিল এলাকায় মানুষের মনে ভয় ধরানো। এর আগেও অপরাধমূলক কাজে নাম জড়িয়েছে মিনি ফিরোজের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, EM বাইপাস থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে পুলিশের নজর এড়িয়ে কীভাবে এমন তাণ্ডব চালাল দুষ্কৃতীরা ? কীভাবেই বা দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এত আগ্নেয়াস্ত্র ? গতকাল রাতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল সন্ধেয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপাদাপির পর ফের ভোর রাতে চলে হামলা, বোমাবাজি। বিরিয়ানির দোকান লক্ষ্য় করে বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে বোমা ছোড়ার ছবি। আর এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে আনন্দপুর থানার পুলিশের ভূমিকায়। প্রশ্ন হচ্ছে, গতকাল সন্ধেয় হামলার ঘটনার পর কেন কেন রাতে পুলিশ পিকেট ছিল না? বোমাবাজির সময় কোথায় ছিল পুলিশ?
এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দুর প্রশ্ন, "কলকাতার অপরাধ জগতের 'অন্ধকূপ' হল গুলশান কলোনি! এই কলোনিতে প্রচুর বাংলাদেশি মুসলিম এসে ঘাঁটি গেড়েছে। প্রায়শই ভিন্রাজ্যের পুলিশ এসে ওই এলাকায় হানা দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের। কলকাতার একের পর এক অপরাধের ঘটনায় বার বার নাম জড়িয়েছে গুলশন কলোনির। ঘন জনবসতি এবং ঘিঞ্জি এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ এই প্রথম নয়, আগেও একাধিক বার সেই কথা শোনা গিয়েছে পুলিশকর্তাদের মুখেই। কখনও ভরসন্ধ্যায় যুবককে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে, কখনও আবার দুই গোষ্ঠীর বিবাদে প্রকাশ্যেই মুড়ি মুড়কির মতো বোমা-গুলির বৃষ্টি হয়েছে। সব জেনে শুনেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন ব্যর্থ ? কারণ খুব স্পষ্ট - শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর সিন্ডিকেটের লড়াই পুলিশ আটকাতে গেলে পুলিশের শীর্ষকর্তাদের চেয়ার টলে যাবে।"