পূর্ণেন্দু সিংহ, সৌমিত্র রায়, কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। এখন থেকেই তার প্রচার-প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই আবহেই জোর ধাক্কা খেল বঙ্গ বিজেপি (BJP)। কারণ তৃণমূলে যোগ দিলেন তাদের বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বিধায়ক হরকালী প্রতিহার (Harakali Protiher)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অভিযোগে যখন তপ্ত রাজ্য রাজনীতি, ঠিক সেই সময়ই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) হাত থেকে জোড়াফুলের (TMC) পতাকা নিলেন হরকালী।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে তৃণমূলে যোগ দিলেন হরকালী। নিজে হাতে তাঁর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তৃণমূলে যোগ দিয়ে হরকালীর বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য প্রিয় জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়নের জোয়ার এনে দিয়েছেন, তাতে শামিল হতে এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চিত করছে, তার প্রতিবাদ জানাতে আমি তৃণমূলে যোগ দিলাম।”
তালডাংরার জগৎপুর সম্মিলনী হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক হরকালী। ২০১৯-‘২০ সালে বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ১১ হাজার ৭৮৫ ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। সেই হরকালীই পদ্ম ছেড়ে যোগ দিলেন জোড়াফুল শিবিরে।
হরকালীর যোগদান নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “যাঁরা বিধায়ক হন, কাজ করতে চান। শুধু হিংসা এবং বিভেদের রাজনীতি করতে চান না। যাঁরা বিজেপি থেকে এসেছেন, বলছেন, এভাবে কাজ করতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। সুস্থ মস্তিষ্কে কাজ করতে চান।” আগামী দিনে বিজেপি থেকে আরও অনেকের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফিরহাদ।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। ফলে বিজেপি-র বিধায়কের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৫।
এর পর একে একে তৃণমূলে যোগ দেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী,
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। এবার হরকালীর নাম উঠল সেই তালিকায়।
শুধু তাই নয়, যে বাঁকুড়া বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যে জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে, ২০২১ সালে আটটিতেই পদ্ম ফুটেছিল, সেখানে এবার সংখ্যাটা তৃণমূলের সঙ্গে সমান সমান হয়ে দাঁড়াল। তবে এই অস্বস্তি ঢাকতে চাইছে বিজেপি। যে কারণে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, “মিষ্টি বিলি কর রে, মিষ্টি বিলি কর। একটা আপদ বিদায় হল। ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা করছিল। আমাদের পুরনো নেতাদের ধরে টিকিট পেয়েছিল। ও চলে গেলে আমাদের লাভ হবে। বিষ্ণুপুরের কোথাও তৃণমূল বলে কিছু নেই। কোতুলপুরে যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেল।”
লোকসভা নির্বাচনে আর কয়েক মাস বাকি। তার আগে বঙ্গ বিজেপি-কে ৩৫টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ। কিন্তু, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপি-তে ভাঙন অব্যাহত। ফলে রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।