নন্দীগ্রাম(পূর্ব মেদিনীপুর) : "নন্দীগ্রামের অতীত জানে না বলে আগুন নিয়ে খেলছে তৃণমূল। মিথ্যে মামলায় বিজেপি কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে।" নন্দীগ্রামে দলের প্রতিবাদ সভায় আজ এই ভাষাতেই সুর চড়ালেন বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের হরিপুরে সরকারি আধিকারিককে হেনস্থার ঘটনায় সম্প্রতি শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তারই প্রতিবাদে এই সভা। সেই সভামঞ্চ থেকে সুর চড়ালেন শুভেন্দু।


রাজ্যের শাসকদলকে একহাত নেন বিরোধী দলনেতা। বলেন, "যে পুলিশ অফিসারদের দিয়ে অত্যাচার করিয়েছিল সিপিএম, তাদের পরিণতি কী হয়েছে? যাদের দিয়ে পাপ কাজ করাচ্ছে, তাদের পরিণতি কী হবে জানি। কলকাতা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে সভা করলেও অনুমতি পেতে অসুবিধে হয় না। অথচ পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে নিয়ে সভা করলে বাধা দেওয়া হয়। সিপিএমের মতোই পুলিশকে দিয়ে অত্যাচার করাচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতারা এলে কোভিড বিধি লঙ্ঘন হয় না!নন্দীগ্রামের অতীত জানে না বলে আগুন নিয়ে খেলছে তৃণমূল।"


প্রসঙ্গত, কৃষি পণ্য বিলিতে বৈষম্যের অভিযোগে দিনকয়েক আগে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক বিদ্যুৎবরণ মণ্ডলকে হেনস্থা ও নিগ্রহ করা হয়। টানাটানিতে ছিঁড়ে যায় জামার ওপরের বোতাম। কিন্তু তাও বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে নিস্তার পাননি নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক। প্রথমে বগলদাবা করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর শুরু হয় টানাহেঁচড়া। গ্রামের মহিলারাও বাদ যাননি । ঘিরে ধরে বিক্ষোভের মধ্যে হাতও চালান কয়েকজন। তারপর কয়েকশো ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর মধ্যে এভাবেই টানতে টানতে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি অফিসে।


কৃষিপণ্য বিলিতে বৈষম্য ও স্বজনপোষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে শুক্রবার এভাবেই হেনস্থা করা হয় নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিককে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোর। নন্দীগ্রামের কৃষকবাজারে রাজ্য কৃষি দফতরের অফিস রয়েছে। সেখানে হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের ডেপুটশন ছিল। তাঁদের অভিযোগ, বীজ থেকে শুরু করে কৃষিকাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য বিলিতে স্বজনপোষণ করা হচ্ছে। 


এরই প্রতিবাদে কয়েকদিন আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ, মেঘনাদ পালের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কৃষি দফতরের অফিসের সামনে পৌঁছতেই, কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে তাড়া করা হয়। তারপর চলে হেনস্থা। এর জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই আধিকারিক। যদিও এক বিক্ষোভকারী বলেন, কোনও হেনস্থা করা হয়নি! উনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এপ্রসঙ্গে মেঘনাদ পাল জানিয়েছিলেন, এই অঞ্চল সবদিক থেকে বঞ্চিত। তাই ডেপুটেশন দিতে এসেছিল। আমরা আগে থেকেই সময় চেয়েছিলাম।


এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সভা করে বিজেপি। সেখান থেকেই সুর চড়ান শুভেন্দু। বলেন, "গোপালচকের মহিলার গায়ে হাত দিয়েছে, সিবিআই খুঁজছে ৩০ জনকে। বাড়ি ভাঙচুর করেছে, আমরা ছেড়ে দেব নাকি? সবকিছুর হিসেব হবে। নন্দীগ্রামের মানুষরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে, সমস্ত মামলা রাজ্য সরকারের প্রভাবমুক্ত করে তদন্ত হোক। যারা গায়ে হাত দিয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। পুলিশকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে মিথ্যে মামলা লিখিয়ে আনা হচ্ছে। পুলিশ ছাড়া আর তৃণমূল নেই। পুলিশ বাবা রক্ষা করো।"