আশাবুল হোসেন, সমীরণ পাল, হিন্দোল দে, কলকাতা : বার্ধক্য ভাতার বিপুল আর্থিক যোগানের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইনকাম ট্যাক্সের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর জেনারেলকে চিঠি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এত টাকা কোথা থেকে আসবে তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্য়া দেওয়া হয়নি বলে চিঠিতে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ শানিয়েছেন অমিত মালব্যও। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল।


"শুধু এটা এক মাস নয়, দুই মাস নয়। রাজ্য় সরকার যদি কোনও কারণে না শুরু করতে পারে, যতদিন আমি বেঁচে আছি, আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। এর ব্য়বস্থা আজ যেমন করেছি, আজীবন আপনি যতদিন থাকবেন, এই বার্ধক্য় ভাতা আপনি পাবেন।" রবিবার ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়ে, বার্ধক্য ভাতা নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পরই, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, তবে তৃণমূল সরকার কি পরিষেবা দিতে ব্য়র্থ ? সরকারের ব্য়র্থতার দিকেই কি ঘুরিয়ে আঙুল তুললেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ?

আর এর ঠিক পর দিনই, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যকে 'হাতিয়ার' করেই, ময়দানে নামলেন শুভেন্দু অধিকারী। বার্ধক্য ভাতার বিপুল আর্থিক যোগানের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধী দলনেতা। চিঠি দিলেন ইনকাম ট্যাক্সের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর জেনারেলকে। চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, মাস দু'য়েক আগে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেছিলেন যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর সংসদীয় এলাকায় এই ভাতা নাও দিতে পারে, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই টাকা দেবেন।

৭৬ হাজার ১২০ জন উপভোক্তাকে মাসে ১০০০ টাকা করে দিতে গেলে, খরচ হবে ৭ কোটি ৬১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস নিয়ে তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অষ্পষ্ট। অভিষেক বলেন, 'আমরা ১৬ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে আইডেন্টিফাই করেছি। কত? ১৬ হাজার ৩৮০। ১৬ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ৪ জন বা ৫ জনের দায়িত্ব নিয়েছে সরাসরি তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে এই ৫ জন বয়স্ক মানুষের জীবনে হাসি ফোটাবে।'

এদিন অবশ্য বার্ধক্য ভাতা নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তিনি বলেন, "বার্ধক্য ভাতার অনেকে আবেদন করেছেন। কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যাঁরা সরাসরি মুখ্য়মন্ত্রী, দুয়ারে সরকারে আবেদন করেছেন, তাঁরটা আমরা করে দিতে পারব।"


এপ্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "আমরা বলছি রাজ্য সরকার সকলকে বার্ধক্য ভাতা দিক। শুধুমাত্র ভাইপোর কয়লা, বালি, মদের কমিশনের টাকায় ভোটারদের ঘুষ দিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যে কাজটা করেছেন, ভারতের আইনে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।"

শুভেন্দু অধিকারীর এই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য লেখেন, তৃণমূল সাংসদ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ডায়মন্ড হারবারের ৭৬ হাজার ১২০ জন উপভোক্তার জন্য একটি প্রাইভেট পেনশন প্রোগ্রাম লঞ্চ করেছেন। সেখানে রহস্যজনক ডোনাররা অনির্দিষ্টকালের জন্য মাসিক ৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা করে দেবেন। এটা অত্যন্ত সন্দেহজনক।


এর জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদ্ধতিতে বার্ধক্য ভাতা দিয়েছেন সেটা সম্পূর্ণ চেকের মাধ্যমে এবং ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। ফলে, এই আয়করকে চিঠি দিলাম, কালো টাকা সাদা করা হচ্ছে, এই ধরনের কুৎসামূলক যে কথাগুলো সেগুলো কোথাও ধোপে টিকছে না। এর ওঁর বাড়িতে না ঢুকে আগে অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের বাড়িতে তল্লাশি হোক।"

উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছনোর আগেই ডায়মন্ড হারবারে বার্ধক্য ভাতা নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক। বিতর্ক ছাপিয়ে কি এগিয়ে যাবে ডায়মন্ড হারবার মডেল? সেটাই এখন দেখার।