রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: বাবার জন্মদিন বলে কথা। একটু ভেবে-চিন্তে 'উপহার' না দিলেই নয়। তা বলে নিজের হাতে 'জিপ' বানিয়ে উপহার দেবে ছেলে? শুনতে একটু অবিশ্বাস্য লাগলেও হাতেকলমে এমনই করে দেখিয়ে দিয়েছেন মঞ্জুর মৌলা। পেশায় সরকারি কর্মী মঞ্জুরের কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেই। তাতে কী? গুগল ঘেঁটে কী ভাবে গাড়ি তৈরি করতে হয়, তা কিছুটা শিখে নিয়েছিলেন মঞ্জুর। তার পর সটান সেই উপহার তুলে দিলেন বাবা, মহম্মদ আশরাফ মৌলার হাতে। পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman Jeep News) ঘটনা।
কী জানা গেল?
উপহার পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন আশরাফ। বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধকে কাজের সূত্রে কাটোয়ায় স্কুটি করে আসা যাওয়া করতে হয়। সেই দেখে মঞ্জুরের চিন্তা হত, দু'চাকার গাড়িতে যাতায়াত করতে গিয়ে বাবার যেন কোনও বিপদ-আপদ না ঘটে। সেখান থেকেই চার-চাকা তৈরির ভাবনা আসে তাঁর মাথায়। গুগল থেকে গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া কিছুটা শিখেছিলেন। তার পর, টোটোর ইঞ্জিন, ন্যানো গাড়ির সামনের ভাঙা অংশ কিনে ফেলেন আশরাফ। সেই সব দিয়েই তৈরি হল জিপ। মঞ্জুর নিজে কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের সরকারি কর্মী। সেই কাজ সামলে বাবার জন্য গাড়ি তৈরি করতেন। প্রত্যেক সন্ধেয় নিয়ম করে দফতর থেকে ফিরে গাড়ি তৈরি করতে বসাটা যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর। তবে সবটা একা করেননি। স্থানীয় এক মিস্ত্রির সাহায্য নিয়েছিলেন। ছ'মাসের টানা চেষ্টায় অবশেষে সাফল্য পান। গাড়ি স্টার্ট নিয়ে চলতে শুরু করে। স্বপ্নপূরণ হয়েছে বুঝতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন মঞ্জুর। অক্টোবরে বাবার জন্মদিন। সেই দিনেই নিজের হাতে তৈরি জিপ বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছেলে। এমন উপহার পেয়ে খুশিতে ডগবগ মহম্মদ আশরাফ মৌলা। জানালেন, ছেলে যদি নতুন গাড়িও কিনে দিতেন, তাতেও এত আনন্দ হত না। এটাই তাঁর জীবনের সবথেকে দামি উপহার। কাটোয়ার রাজোয়ার বাসিন্দা মঞ্জুর মোল্লা টোটোর পার্টস দিয়ে তৈরি যে ইলেকট্রিক জিপ তৈরি করেছেন, তার প্রতি কিলোমিটারে খরচ দু'টাকা। ব্যাটারি চার্জ দিলে গাড়ি চলবে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘণ্টায় গাড়ির গতি ৩৫ কিলোমিটার। ছেলের তৈরি গাড়িতে করেই এখন চার বছরের নাতিকে নিয়ে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মহম্মদ আশরাফ মোল্লা।