নয়াদিল্লি : "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমনটা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ যদি ততটাই উন্নতি করে থাকে, তাহলে রাজ্য থেকে কেন এত মানুষ পরিযায়ী হচ্ছেন ?" এই প্রশ্ন তুললেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সংবাদ সংস্থা ANI-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। শমীক বলেন, "দেশের ৭২ শতাংশ জালনোটই আসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে, সেটাও আবার মালদা জেলা থেকে। সরকার কী করছে ? পশ্চিমবঙ্গেও SIR হবে। নাহলে, রাজ্যটা পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত হবে। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একত্রীকরণ ঘটেছে... পশ্চিমবঙ্গে মধ্যযুগীয় যুগের দৃশ্য দেখা যায়।"

 

এদিকে মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বইয়ের ভাসিতে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক আবু বক্কর সিদ্দিকির দেহ উদ্ধার হয়। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পরিযায়ী শ্রমিকের বস্তাবন্দি দেহ পাওয়া যায়। খুনের অভিযোগ ধৃত মৃতের স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক। মহারাষ্ট্রে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন নিহত আবু বক্কর সিদ্দিকি। গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুন বলে প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। গতকাল রাতে বাদুড়িয়ার বাড়িতে পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরেছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন পরিবারের লোকেরা।

বাঙালি হওয়ায় ওই শ্রমিককে খুন করা হয়েছে বলে সোশাল মিডিয়া পোস্টে অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সোশাল মিডিয়ায় পোস্টে রাজ্যের শাসকদলের তরফে লেখা হয়েছে, 'আর কত বাঙালি খুন হলে দেশের ঘুম ভাঙবে? দেশজুড়ে বাঙালিদের হয়রান করা হচ্ছে, মারা হচ্ছে, ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এটা কোনও একটি ঘটনা নয়, একটি নির্দিষ্ট ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আক্রমণ। আদালতের মাধ্যমে , রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। দিল্লিতে সরকার চুপ করে থাকলে, দিল্লি পর্যন্ত অভিযান হবে।'

যদিও তৃণমূলের অভিযোগের পাল্টা জবাবে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের এই রাজনীতি মিথ্যাচারের রাজনীতি, দ্বিচারিতার রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি, ভাষাভিত্তিক উগ্র প্রাদেশিকতা তৈরির রাজনীতি... আজকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাঁরা কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিক আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা। বিভিন্ন রাজ্যে যে বাঙালিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তিনি হিন্দু কিংবা মুসলমান হোক, তাঁদের চিনিয়ে দিচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনার, মুর্শিদাবাদের ভারতীয় মুসলাম-ভারতীয় হিন্দুরা...যে তাঁরা আমাদের রুজিরুটিতে হাত বসাতে এসেছেন এখানে। এরা আমাদের দেশের নাগরকি নয়। পুলিশকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করছে বাঙালিরা। সুতরাং এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে যে কথা বলছেন, এর কোনও রাজনৈতিক বাস্তবতা নেই। সমাজের এর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই।

পাল্টা তৃণমূলের তরফে দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, শমীকবাবু যে কথাটা বলছেন, বাংলায় কাজ নেই বলে বাইরে যাচ্ছেন...আরে বাংলা থেকে তো বাইরে ২২ লক্ষ লোক কাজ করতে যান। কিন্তু, বাংলায় যে দেড় কোটি লোক বাইরে থেকে কাজ করতে আসেন, সেগুলো কোন রাজ্য থেকে আসেন ? সেগুলো সব বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে। গোটা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকের যে সাপ্লায়ার তাতে এক নম্বরে উত্তরপ্রদেশ। দু'নম্বরে বিহার, তারপর রাজস্থান। এগুলো কারা শাসন করছে ? বিজেপি শাসন করছে। তাহলে বাংলায় এত উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে লোক কাজ করতে আসছে কেন ? বিজেপি তাদের কাজ দিতে পারছে না ? এসব বলে লাভ নেই।