সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: কিছুটা অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য চেন্নাই (Chennai) যাচ্ছিলেন বছর তিরিশের সঞ্জয় দে। সেই উপার্জনের চেষ্টাই কি কাল হল? এদিন বাদুড়িয়া (Baduria) বিধানসভার দক্ষিণ চাতরা গ্রামের বাসিন্দা, সঞ্জয় দে-র দেহ যখন বাড়ি ফিরল, তখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পাড়াপড়শির মধ্যে। পরিবারে কান্নার রোল। বালেশ্বরে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় (Odisha Train Accident) প্রাণ গিয়েছে সঞ্জয়ের।


কী ঘটল?
নিহত যুবক বাদুড়িয়া বিধানসভার দক্ষিণ চাতরা গ্রামের বাসিন্দা। আজ তাঁর দেহ কফিনবন্দী অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন । বাদুড়িয়ার বৈতরণী শ্মশানে নিয়ে গিয়ে তাঁর শেষকৃত্য পালন করা হয়। গোটা সময়টা হাজির ছিলেন বসিরহাটের মহকুমা শাসক মৌসুম মুখোপাধ্য়ায়, এসডিপিও অভিজিৎ সিনহা ও বাদুড়িয়ার বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম ওরফে দিলু। শোকের খবর পেয়ে চলে আসেন সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজন-সহ শতাধিক মানুষ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকা বাড়ি করতে গিয়ে বেশ কিছু ঋণগ্রস্ত হয়েছিলেন ওই যুবক। সে কারণেই চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দুর্ঘটনা। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁর দেহ শনাক্ত করেন। আজ সকাল দশটা নাগাদ বাড়িতে নিয়ে আসা হয় যুবকের দেহ। শেষকৃত্যও হয়। বাদুড়িয়ার বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এই ভাবে তরতাজা প্রাণের অকালপ্রয়াণের কোনও ক্ষতিপূরণ কি হয়? প্রশ্ন তুলছেন পড়শিরা। চোখের জল থামছে না পরিবারের। 


কী ঘটেছিল?
গত শুক্রবার, বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার জেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ৮টি কামরা। শালিমার থেকে চেন্নাইয়ের পথে যাচ্ছিল ট্রেনটি। বালেশ্বরের কাছে বাহানাগর স্টেশনে কার্যত ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে এগোনোর মাঝে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পর কার্যত দেশলাইয়ের খোলের মতো লাইনের পাশে উল্টে পড়ে ট্রেনের কামরাগুলি। দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর স্থানীয়রা প্রথমে ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। যারপর বিভিন্ন কামরা থেকে শুরু হয় মরিয়া উদ্ধারকার্য। এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত ৬২ জন মারা গিয়েছেন। তার তালিকা হাতে পেয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে আরও জানা যায়, এখনও ১৮২ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। জেলায় জেলায় ছবি পাঠানো হয়েছে, শনাক্তকরণের জন্য। শনিবার নিজে বালেশ্বর পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও যান। রবিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে বলেন, "লাগাতার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি আমরা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রচুর মানুষের প্রাণ গিয়েছে। প্রিয়জনকে খুঁজে পাচ্ছে না অনেক পরিবার।" তবে এত তাড়াতাড়ি হতাহত নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলেও জানান মমতা। তাঁর যুক্তি, দু'টি ট্রেনে সংরক্ষিত আসনে প্রচুর যাত্রী তো ছিলেনই, অসংরক্ষিত কামরাতেও প্রচুর লোকজন ছিলেন। সকলের নামের তালিকা থাকে না রেলের কাছে। সেই তালিকা এখনও রাজ্য সরকারের হাতেও এসে পৌঁছয়নি। তাই হতাহত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সকলে।


আরও পড়ুন:কোথা থেকে শুরু বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন? কেনই বা গুরুত্বপূর্ণ এই দিন?