বীরভূম: জামিনের আবেদন খারিজ, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকবে অয়ন শীল (Ayan Sil)। বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়নের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছে ইডি (Enforcement Directorate)।  তাদের কথায়, 'বোলপুর এখন ২টি কারণে 'বিখ্যাত', দুর্নীতি আর গরুপাচার। রবীন্দ্রনাথ কাঁদেন, বোলপুর এখন ২টি সির জন্য বিখ্যাত-করাপশন, কাউ স্মাগলিং। বাংলায় শিক্ষায় দুর্নীতি দেখে কবিগুরু নীরবে কাঁদেন, তাঁর হৃদয় রক্তাক্ত হয়। এসএসসি দুর্নীতিতে অন্তত ১ হাজার জনের থেকে ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন। মাত্র ১৩ দিনেই হদিশ মিলেছে ৮টি ফ্ল্যাট, ৫টি গাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্পের। ৪০টির বেশি অ্যাকাউন্টে এসেছে ৮ কোটি টাকা।'


এ প্রসঙ্গে ইডির আরও মন্তব্য, 'নিয়োগ-দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের প্রভাবশালী-যোগ স্পষ্ট। অয়নকে জেরা করে মিলেছে ১৫ জন প্রভাবশালীর নাম। যাঁদের মধ্যে কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁদের থেকেই আসত চাকরি বিক্রির সুপারিশ, টাকাও পৌঁছত তাঁদের কাছেই। অত্যন্ত প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছেছে অন্তত ২৬ কোটি টাকা। এক এজেন্টের মাধ্যমে তাঁদের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন অয়ন শীল।


এসএসসি-র সমস্ত নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ১ কোটি টাকা নিয়েছেন। পার্থ ও অয়নের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতেন কুন্তল।' পাশাপাশি বিশেষ পদ্ধতিতে ওএমআর শিটের নম্বর কমানো হত বলেও দাবি ইডি-র। 'ওএমআর শিটে একটি বাড়তি টিক দেওয়া হত। এর ফলে সেই ওএমআর শিটটি বাতিল হয়ে যেত। যারা টাকা দিয়েছে সেই প্রার্থীদের বলা হত ফাঁকা ওএমআর শিট জমা দিতে। ফাঁকা শিটে নম্বর বসিয়ে দেওয়া হত'। এভাবেই যোগ্য প্রার্থীদের নম্বর কমানো হত বলে দাবি ইডি-র।


অয়ন শীলকে জেরা করে অন্তত ১৫ জন প্রভাবশালীর নাম পাওয়া গেছে। তার মধ্যে অত্যন্ত এক প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছে গেছিল নিয়োগ দুর্নীতির ২৬ কোটি টাকা! আজ আদালতে এমনই বিস্ফোরক দাবি করল ইডি। এখনও পর্যন্ত পাওয়া অয়ন শীলের সম্পত্তিরও খতিয়ানও এদিন আদালতে দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা। এদিনের শুনানিতে উঠে আসে কবিগুরুর প্রসঙ্গও। 


স্কুলের নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীল! তার মধ্যে ২৬ কোটি টাকাই পৌঁছে গেছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তির কাছে! অয়ন শীলকে জেরা করে অন্তত ১৫ জন প্রভাবশালীর নাম পাওয়া গেছে। 


শনিবার বিশেষ ইডি আদালতে এমনই বিস্ফোরক দাবি করল ইডি! হেফাজতের মেয়াদ শেষের পর, এদিন আদালতে তোলা হয়েছিল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলকে। সেখানে সওয়াল জবাব চলাকালীন, উঠে এল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গও! ইডির আইনজীবী বলেন, নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য খাতের অর্থ দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন কবিগুরু।  কিন্তু কবিগুরু কি খুশি? নিশ্চিতভাবে নয়। 
কবিগুরু নীরবে কাঁদেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি কীভাবে বাংলাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তা দেখে তাঁর হৃদয় রক্তাক্ত হয়। কবিগুরু কাঁদেন, কারণ আজ বোলপুর দুটো 'C'-র জন্য বেশি পরিচিত হয়ে গেছে। Corruption এবং Cattle Smuggling। 


ইডির আইনজীবী এদিন দাবি করেন, অয়ন শীলের দুর্নীতির দুটি অংশ রয়েছে। একটা হল শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি এবং অপরটি হল পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি। SSC নিয়োগ দুর্নীতিতে ১ হাজার জনের থেকে মোট ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল। তার মধ্যে ২৬ কোটি টাকা অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তির কাছে এজেন্টের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তির নাম কেস ডায়েরিতে রয়েছে। প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। ইডির আইনজীবী আরও জানান, SSC দুর্নীতিতে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় অয়ন শীলের থেকে ১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। 


পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অয়ন শীলের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছেন কুন্তল ঘোষ। আদালতে এদিন অয়ন শীলের সম্পত্তি নিয়েও একাধিক বিস্ফোরক দাবি করেছে ইডি। আইনজীবী বলেন, অয়ন শীলের ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময়ে ৮ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য হাতে এসেছে। এ ছাড়াও অয়ন শীলের ৮টি ফ্ল্যাট, ৫টি গাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্প ও একটি হোটেল রয়েছে তাঁর। 


অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে ইডির তল্লাশি চালানোর সময় বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত নথিও উদ্ধার হয়। ইডির দাবি, রাজ্যের অন্তত ৬০টি পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অয়ন শীল। কীভাবে OMR শিট বিকৃত করা হত, তাও এদিন আদালতে জানান ইডির আইনজীবী। এদিন অয়ন শীলের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।