কলকাতা: ‘এক্তিয়ার বাড়লেও আইন-শৃঙ্খলায় হস্তক্ষেপের ক্ষমতা নেই বিএসএফের। অনুপ্রবেশকারী বা চোরাচালানকারীদের রোখাই বিএসএফের প্রধান কাজ। কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি বিএসএফ-কে অতিরিক্ত কোনও ক্ষমতা দেয়নি’।
কোচবিহারে গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ, ফের উস্কে দিয়েছিল বিএসএফের কাজের পরিধি বদল নিয়ে বিতর্ক। এই ঘটনার পর বিজেপি-বিরোধী দলগুলি ফের অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আদতে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ। যদিও, বিজেপি এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
কোচবিহারে BSF-এর গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে, তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক তরজা। আর সেই আঁচই নতুন করে ইন্ধন জোগায়। BSF-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কে। সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়,
পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সীমান্তে BSF-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ৫০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত BSF-এর তল্লাশি এবং গ্রেফতারের অধিকার থাকবে।
এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং অসমে BSF-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ছিল ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। রাজস্থানে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং গুজরাতে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
এবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সবক’টি রাজ্যেই এই পরিধি ৫০ কিলোমিটার করেছে মোদি সরকার। অর্থাৎ, ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত BSF-এর তল্লাশি এবং গ্রেফতার করতে পারবে।
ফিক্স আউটএর ফলে তৃণমূলশাসিত পশ্চিমবঙ্গ, কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাব এবং বিজেপি শাসিত অসমে BSF-এর কাজের পরিধি বেড়েছে। কংগ্রেসশাসিত রাজস্থানে তা একই থাকল। আর বিজেপি শাসিত গুজরাতে BSF-এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ৩০ কিলোমিটার কমে গেল।
BSF-এর IG অপারেশনস সলোমন যশ কুমার মিন্জের যুক্তি ছিল, আগে একেকটি রাজ্যের কর্মক্ষেত্রের পরিধি একেক রকম ছিল। এবার তাতে সামঞ্জস্য আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও, বিরোধীরা এই দাবি মানতে নারাজ। শুক্রবার কোচবিহারে BSF-এর গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর পর এনিয়ে ফের একবার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। সব মিলিয়ে কোচবিহারকাণ্ডের পর, বিএসএফের কাজের পরিধি বৃদ্ধি ঘিরে তরজার পারদ সপ্তমে।
বিএসএফের পরিসর বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ১৬ নভেম্বর বিধানসভায় প্রস্তাব আনে রাজ্য সরকার। সংসদেও সরব হওয়ার হুঁশিয়ারি তৃণমূলের।
অন্যদিকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিএসএফ-এর এডিজি ওয়াই বি খুরানিয়া আরও বলেন ‘দুর্ভাগ্যজনক অভিযোগ। আমাদের চারহাজার কর্মরত মহিলা জওয়ান (Jawan) আছেন। তবে এ ধরনের অভিযোগ এলে তদন্ত করে দেখা হবে।’ গতকাল বিধানসভায় উদয়ন গুহ (Udayan Guha) অভিযোগ করেন সীমান্ত তল্লাশির নামে মহিলাদের হেনস্থা করে বিএসএফ (BSF)। সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরেই সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানালেন, এডিজি বিএসএফ ওয়াই বি খুরানিয়া (Y B Khurania bsf)
মালদা (Malda) ও মুর্শিদাবাদ (Murshidabad), এই দুই জেলার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। কোচবিহারের (Coochbehar) সিতাইয়ে (Sitao) বিএসএফের গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন এইসব সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের রাজ্য সফরের দিন কোচবিহারে BSF’এর গুলি। ৩ জনের মৃত্যু। বিএসএফের (BSF) মদত ছাড়া সীমান্তে কীভাবে সম্ভব গরু পাচার? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উদয়ন গুহ (Udayan Guha)।
সম্প্রতি দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, 'যদি গুলি চালানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তা কেন কোমরের উপরে উঠল? মাথায় গুলি লেগে প্রকাশ বর্মনের কেন মৃত্যু হল? আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি, বিএসএফ এর মদত ছাড়া, কোনও অবস্থাতেই গরু পাচার-সহ অন্য কিছু পাচার করা সম্ভব নয়, বিএসএফ যদি মদত না দেয়। কাটা তারের বেড়ার ৫০০ গজ পর পর একটা করে গেট থাকে, সেই গেট দিনে তিন বার খোলা হয়। বিএসএফের মর্জি মত হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার চিৎকারে এলাকা খানখান হয়, তবু বিএসএফ গেট খোলে না। গেট খোলে না, কাটা তারের বেড়া, স্টিলের ব্লেড দেওয়া কাটা তার, সেখানে কি ভাবে বিএসএফের মদত ছাড়া গরু পাচার?'