কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: প্রায় চার দশক ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ঠিকানা ছিল, পাম অ্যাভিনিউর বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও দু'কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটেই থাকতেন। যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, রাইটার্স থেকে রোজ দুপুরে খেতে আসতেন এখানে। অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে, ছটফট করতেন বাড়ি ফেরার জন্য। বৃহস্পতিবার সেই বাড়ি থেকেই তিনি বেরোলেন শেষবারের জন্য। একতলার দু'কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটটা ফাঁকা করে দিয়ে। রেখে গেলেন একরাশ স্মৃতি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতিদিনের সঙ্গী তপন পাইক। এদিন ফাঁকা ঘরে বসে স্মৃতি আওরালেন তিনি। এবিপি আনন্দকে জানালেন শেষের দিনগুলি। তপনবাবুর কথায়, 'শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীতই শুনতেন। এই মিউজিক সিস্টেমে আর অন্য কোনও গান নেই। রবীন্দ্রসঙ্গীতটাই ভালবাসতেন। যখন বলতেন তখন গান শুনতেন। অনেক সময়ই খবর শুনতে চাইতেন, সেই সময় হয়তো টিভি চালিয়ে দিতাম। তবে শুধুমাত্র খবরই শুনতেন টেলিভিশনে। আর কিছুতেই পছন্দ ছিল না।'
শেষের দিকে মন খারাপ থাকত বুদ্ধবাবুর। কেন? সেই কারণ জানাতে গিয়ে তপনবাবু জানালেন, 'শরীর খারাপ হওয়ার পর থেকে চোখেও কম দেখতেন। ওই কানে শুনতেন গান কিংবা খবর। আর পত্রিকা থেকে দৈনিক খবর পড়ে শোনানো হত। আর অন্য কিছু তেমন একটা পছন্দ করতেন না। খবরের কাগজের হেডিং আগে শোনাতে হত। যদি কোনও খবর মনে ধরত তখন বিস্তারিত পড়ে শোনানো হত।'
তপন এও বলেন, 'এত সৎ, আন্তরিক, নিষ্ঠাবান ছিলেন, যারা কাছে না এসেছে তাঁরা ছাড়া বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবে না। বই ছিল প্রাণ। ওটাই অন্তরের ছিল। ইদানিং চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়ায় বই পড়তে পারতেন না, খুব দুঃখ পেতেন সেটা নিয়ে। একসময় তো নিজেই লিখেছেন, লিখতেন। কিন্তু শরীরটা খারাপ হওয়ার পর থেকে সেটাও পারতেন না। সেই সময় একজন আসতেন যাকে তিনি মুখে বলে বলে দিতেন, আর লেখা হত। তবে করোনার পর চিকিৎসকরাই বারণ করে দিয়েছিলেন বাইরের লোক এখানে আসত। অসুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই মনে একটা কষ্ট অনুভব করতেন।'
আরও পড়ুন, মাথার উপর রবীন্দ্রনাথ, একঘর শুধু বই- বুদ্ধদেবের শেষযাপনেও সঙ্গী কবিগুরু
বিছানার পাশে এখনও পড়ে রয়েছে না খাওয়া ওষুধ। তপনবাবুর কথায়, 'আজ সকালে এই ওষুধটা আর খাওয়ানো গেল না। পড়েই রইল। প্রতিদিনের নিয়ম মতো আম, প্রোটিন পাউডার আর কিছু ওষুধ মিলিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। তারপর এই ওষুধও খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আর কিছু করা গেল না। ডাক্তারবাবু এসে জানালেন সব শেষ'। এই বলেই কান্নায় ভাঙলেন তপনবাবু।
বুদ্ধবাবুর অভ্যেস, ভাল লাগা সবই নিজের হয়ে গেছিল বাড়ির কর্মীদের। আজ মানুষটা চলে যাওয়ার পর, তাঁদের কোনও কাজ নেই। সময় যেন কাটছে না। কথা বলতে গেলে গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসছে কান্না।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে