কলকাতা: প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিল লালঝাণ্ডা। সেটা বুকে নিয়েই বাংলাকে বিদায় জানালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পে উন্নত করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেই স্বপ্নেরই বড় পদক্ষেপ ছিল সিঙ্গুর প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই সময়ে সিঙ্গুর আন্দোলনই রাজ্য থেকে বাম-বিদায়ের ভিত্তি তৈরি করেছিল। ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিঙ্গুর!


অনেকে তাঁকে কৃষক বিরোধী কিংবা অদক্ষ প্রশাসক বলে যেমন দাবি করেছেন, তেমনই লক্ষ লক্ষ মানুষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে এক নিঃশ্বাসে একটাই কথা বলেন, বুদ্ধদেব সেই ব্যক্তি যিনি পশ্চিমবঙ্গকে শিল্প সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন! তাঁর আমলেই উঠেছিল সেই স্লোগান ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত’


সিঙ্গুরকাণ্ডের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধর্মতলায় অনশন করছেন, তখন ২০০৬-এর ২০ ডিসেম্বর তাঁকে একটি চিঠি দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। চিঠির নম্বর ছিল ১৪৪ সিএম। চিঠিতে সেদিনের বিরোধী নেত্রীর উদ্দেশে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, 'মাননীয়াসু, এখনও পর্যন্ত ৯৯৭ .১১ একর জমির মধ্যে ৩৪ একর খাসজমি সহ ৯৫৪ একর জমি হস্তান্তরের সম্মতিপত্র আমরা পেয়েছি৷ জমির মূল্য বাবদ ৮৫ কোটি টাকার চেক এ যাবৎ ৯৫০০ জনকে দেওয়া হয়েছে৷ এখনও স্বীকৃতিপত্র জমা পড়ছে ও চেক বিলি চলছে৷ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে সালি জমির ক্ষেত্রে ১২.৭৬ লাখ টাকা প্রতি একরে এবং সুনা জমির ক্ষেত্রে ১২.৭৬ লাখ টাকা প্রতি একরে৷ নথিভুক্ত বর্গাদারদের জমির ক্ষতিপূরণ মূল্যের শতকরা ২৫ ভাগ টাকা আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে৷ ইচ্ছার বিরুদ্ধে একজন কৃষকেরও জমি নেওয়া হয়নি৷ দেশের কোনও রাজ্যে এই ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির নেই৷'


এর দশদিন পর, অর্থাৎ , ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিধানসভায় লবিতে সাংবাদিকদের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, 'সিঙ্গুরেই হবে টাটাদের কারখানা৷ টাটাদের কেউ কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না৷।' এই কথায় ঔদ্ধত্যের রেশ খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবনে এমন অনেক কথাই বলেছিলেন- যেখানে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন ছিল বলেই মনে করেছেন অনেকে। 


এরপর ২০১১ সালে বাম শাসনের পতন ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন, তখন সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সামনের সারিতে বসেছিলেন তিনি। এরপরে একাধিকবার তাঁর ও মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের মধ্যে সৌজন্যের ছবি দেখা গিয়েছে। যখনই বুদ্ধদেব অসুস্থ হয়েছেন খোঁজ নিয়েছেন মমতা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসার ব্যাপারে তদারকি করেছেন। এদিনও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণের খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে


আরও পড়ুন: চোরাচালান রোখায় অস্ত্র নিয়ে হামলা, পাল্টা গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতী তাড়ালেন মহিলা BSF জওয়ান