কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : কথিত আছে, সময় বর্ধমানের ( Burdwan Durga Puja )  খাজা আনোয়ার বেড়ের জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন খোদ বর্ধমানের মহারাজা আর তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাসবাড়ির দুর্গাপুজো ( Durga Puja 2023 )  ১৫০ বছর পার করেছে। দাসবাড়ির পুজোর প্রচলন করেছিলেন জমিদার মাখনলাল দাস। কিন্তু মাখনলাল দাসের সময়ে ঘটে পুজো হতো,মূর্তি পুজো হত না।পরবর্তী কালে মাখনলালের পুত্র ব্রজেন্দ্র লাল দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তি পুজো শুরু করেন। 


 ব্রজেন্দ্রলাল দাসের নাতি শিবশঙ্কর দাস জানিয়েছেন, ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার কথা বলেন। আর সেই বছর থেকেই  মা দুর্গার মূর্তি পুজোর প্রচলন হয়ে যায় আনোয়ার বেড়ের জমিদার পরিবারে। স্বপ্নাদেশ মতো তৈরি হয় মূর্তিও। একচালার কাঠামোয় অধিষ্ঠিতা দেবীর ডান পাশে বসেন দেবাদিদেব মহাদেব। আর শিব-পার্বতীর দুপাশে বসেন দেবী লক্ষ্মী আর সরস্বতী । তাঁদের নিচে থাকে দেবসেনাপতি কার্তিক আর সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে হয় হরগৌরীর আরাধনা।


শিবশঙ্করবাবু জানিয়েছেন, জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাসের কোনও পুত্র সন্তান ছিল না। এই হতাশাতেই মনমরা থাকতেন খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাপুটে জমিদার, বর্ধমানের মহারাজার বিশিষ্ট বন্ধু ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে। কথিত আছে, দেবীর সেই স্বপ্নাদেশের পর মহাসমারোহে হরগৌরী মূর্তি তৈরি করে পুজোর পরই ব্রজেন্দ্রলাল দাস পুত্রলাভ করেন। দেবীর স্বপ্নাদেশে পুজো করার পর ছেলের জন্ম হয় বলে তাঁর নাম রাখেন দুর্গাচরণ দাস।


আরও জানা যায়, যখন জমিদারী ছিল, পুজোর জাঁকজমক আর জৌলুসও ছিল নজরকাড়া। ব্রজেন্দ্রলালবাবুর আমল থেকেই দাসবাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে আসছে পঞ্চমী থেকে। বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুজো। আগে পুজো উপলক্ষ্যে দালানে নিয়ম করে বসত যাত্রাপালা, গানের আসর। দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া দোতলার ঘর থেকে অন্দরমহলের মহিলারা তা উপভোগ করতেন। দাসবাড়ির পুজোর বিশেষত্ব হল কাঁঠালী কলা, নারকেলের বিভিন্ন মিষ্টি আর গাওয়া ঘি-তে ভাজা লুচি। প্রত্যেকদিনই দেবীর কাছে এই ভোগ নিবেদন করা হয়। আগে সন্ধিপুজোর সময় ছাগ বলি হলেও, ৮০ বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। ছাগের বদলে জমিদার বাড়িতে হয় মণ্ডা বলি।


শিবশঙ্করবাবুর দাবি, সন্ধি পুজোর সময় এখনও দুর্গামণ্ডপের উপর শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। দশমীর দিন দেবীকে বিসর্জন করা হয় পাশের মল্লিকপুকুরে। তখনও আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল। এখন জমিদার বাড়ির দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। পুজোর আগের মতো জৌলুস না থাকলেও রীতি মেনেই জাঁকজমক করে পুজো হয়ে চলেছে দাস বাড়ির দুর্গা দালানে। 


আরও পড়ুন :


কুমারী রূপে কোন অসুরকে বধ করেছিলেন দেবী মহামায়া? কেন হয় কুমারী পুজো?