কলকাতা : দুর্গা পুজোর ( Durga Puja )  অন্যতম অঙ্গ হল কুমারী পুজো ( Kumari Puja ) । সারা দেশে শুধু বাংলা নয়, বিভিন্ন রাজ্যেই রয়েছে এই পুজোর প্রচলন। নাবালিকা শিশুকন্যাকে পুজো করে নারীশক্তিকেই সম্মান জানানো হয় এই পুজোর মাধ্যমে। কুমারীর পায়ে পদ্ম অর্পণ করে আসলে মা দুর্গাকেও বন্দনা করা হয়ে। তন্ত্রমতে কুমারীকে সাক্ষাৎ যোগিনী রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন পুরাণে কুমারী পুজোর গুরুত্বের উল্লেখ রয়েছে। 



কবে হয় কুমারী পুজো


সাধারণত দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে কুমারী পুজো করা হয়।  তবে নিয়ম অনুসারে, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এই তিনদিনই বা কোনও একদিন কুমারী পুজো করা যেতে পারে। বেলুড় মঠ থেকে বিভিন্ন বাড়ির পুজো ও বারোয়ারি পুজোতে কুমারী পুজোর জন্য বেছে নেওয়া হয় অষ্টমী ও নবমী তিথিকেই। 


কেন হয় এই পুজো


এক বছর থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত ঋতুমতী না হওয়া বালিকাদের কুমারী রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। কুমারী পুজো কেন, এই প্রশ্ন তো অনেকের মনেই জাগে। লোকমুখে প্রচলিত, একসময় কোলাসুর স্বর্গ, মর্ত, পাতাল দখল করে নিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিপন্ন দেবতারা মহাকালীর শরণ নেন। তাঁদের রক্ষা করতে দেবী কুমারীরূপে আবির্ভূতা হন।  দেবীর ওই কুমারী রূপেই বানাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই থেকে কুমারী পুজোর প্রচলন।


কোন বয়সের কুমারীর কী নাম


এক এক বয়সের কুমারীকে এক এক নামে পুজো করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা,  ২ বছর হলে সরস্বতী, ৩ বছরের মেয়ে  ত্রিধা, ৪ বছর  হলে কালিকা, ৫ বছর বয়স হলে সে সুভগা, ৬ বছর বয়সী হলে উমা, ৭ বছরের কন্যা মালিনী, ৮ বছরের মেয়ে কুব্জিকা, বয়স ৯ হলে কালসন্দর্ভা, ১০ বছরের মেয়ে অপরাজিতা, ১১ বছর বয়স হলে রুদ্রাণী , ১২ বছর বয়স হলে ভৈরবী, ১৩ বছর বয়সীকে মহালক্ষ্মী,  ১৪ বছরের মেয়ে হলে  পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সের হলে ক্ষেত্রজ্ঞা, ১৬ বছরের মেয়ে অম্বিকা। পুজোর বিধানে বলা কুমারীকে শঙ্খ, বাদ্য, অর্ঘ, বলয় ও বস্ত্রাদি সহযোগে পুজো করতে হয়।


পুজোর আগে কুমারী কে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। পায়ে আলতা ও কপালে সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। এরপর কুমারীকে দেবী জ্ঞানে নানান উপাচারে পুজো করা হয়। পূজারী ও ভক্তগণ কুমারীর মধ্যেই দেবীকে দেখেন। আসলে কুমারীর মধ্যে মাতৃ রূপে পুজো করা হয়। মূলত মনের পশুত্বকে ধ্বংস করতেই এই পুজো। ১৬ টি উপকরণের ব্যবহার হয়।  পাঁচ উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পুজো করা হয়। 


বেলুড় মঠে পুজোর গুরুত্ব


১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে নয় কুমারীকে পুজো করে ছিলেন। তখন থেকে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে বেলুড় মঠে মাহা ধুমধাম করে এই পুজোর প্রথা চলে আসছে। জানা যায়, মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী দেবী মন্দিরে ও কন্যাকুমারীতেও  কুমারী পুজো হয় নিষ্ঠা ভরে।