কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : গোটা বাংলা আজ দোলের রঙে রঙিন । রঙের আনন্দে মেতেছে বাংলার সব প্রান্ত। ব্যতিক্রম বর্ধমান। দোলের দিন রঙের ধারে পাশেও যান না এখানকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই রাজ আমলের প্রথা আজও কঠোরভাবে মেনে চলেন বর্ধমানের বাসিন্দারা। ঠাকুরের পায়ে আবির না দেওয়া পর্যন্ত রঙের আনন্দ থেকে দূরেই থাকেন তাঁরা।
বর্ধমানের রাজার আমল থেকে চলছে এই প্রথা
রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার রঙের উৎসব। আবিরে-রঙে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার পালা। নাচে-গানে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। বসন্তোৎসব উপলক্ষে দিনভর নানা জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
চলছে রং খেলা, আবির মাখিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়। কিন্তু বর্ধমান এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম।
বর্ধমানের রাজারা ছিলেন অবাঙালি। তাদের উপাস্য দেবতা ছিলেন লক্ষীনারায়ণ জিউ। এই লক্ষ্মীনারায়ণ জিউয়ের মন্দিরে দোলের দিন ঠাকুরের পায়ে রং দেওয়া হয়। হোলিকে ঘিরে হত নানান উৎসব,আচার-অনুষ্ঠান। এইসব করতে গড়িয়ে যেত বেলা। প্রজাদের সেদিন আর রং খেলা হত না। তাই বর্ধমান রাজ পরিবার থেকে এই প্রথা চালু করা হয়েছিল যে,দোলের দিন শুধু ঠাকুরের দোল হবে।পরের দিন ঠাকুরের পায়ের রং দিয়ে দোল উৎসবে মাতবে বর্ধমানের আপামর মানুষ।
আরও পড়ুন :
Visva Bharti : বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না বসন্ত উৎসব তবুও রঙিন হল শান্তনিকেতন, উড়ল ফাগ
রাজপরিবারের পুরোহিত জানালেন, দীর্ঘ দিন থেকে এই প্রথা চলে আসছে, দোলের দিন শুধু ঠাকুরের দোল, পরের দিন বর্ধমানের আপামর মানুষের দোল। এদিন দেবতার পায়ে আবির নিবেদন করা হয়। পরের দিন দোল খেলার প্রথা আজও রয়ে গেছে। দোলপূর্ণিমায় শুধু ঠাকুরের দোল, পরের দিন মানুষের দোল। এটাই মেনে আসছেন এখানকার মানুষ।
তবুও মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রভাতফেরী করে নাচ ও গানের মাধ্যমে আবির খেলে বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে বর্ধমানবাসীদের একাংশ । বর্ধমানের ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ জানালেন, বর্ধমান মহারাজা মহাতব চাঁদের সময় থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।
অন্যদিকে দোল পূর্ণিমায় আজ বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসব বন্ধ হলেও, রঙের উৎসবে মেতেছে শান্তিনিকেতন। সোনাঝুরিতে শুরু হয়েছে বসন্তোৎসব। দেশ, বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা ভিড় করেছেন। পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, বোলপুর পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডে জমিয়ে চলছে দোল খেলা।