কমলকৃষ্ণ দে এবং করুণাময় সিংহ, পূর্ব বর্ধমান:  পূর্ব বর্ধমানের রায়না দু নম্বর ব্লকে পুনর্ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়েছে নীল সাদা রাস্তা। টেকসই হলে আগামীদিনে জেলার অন্যান্য জায়গাতেও নীল সাদা রাস্তা তৈরি করবে রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।   


রাস্তাও এবার রাজ্যের থিম রঙে। রাস্তা নীল, বর্ডার সাদা। বসেছে রিফ্লেকটর. অন্ধকারে পথ যাতে ভুল না হয়, তার জন্য রাস্তার দু'পাশে বসেছে ইন্ডিকেটর। পূর্ব বর্ধমানের রায়না দু নম্বর ব্লকের উচালন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একলক্ষ্মী টোল থেকে রাওতাড়া ব্রিজ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি ৩২০ মিটার রাস্তার সম্প্রতি উদ্বোধন করেছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী। 


পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিটুমিনের সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে পুনর্ব্যবহারের যোগ্য নয়, এমন প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রাস্তা। তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২২ লক্ষ টাকা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা এরকম রাস্তা আগে দেখিনি। প্রথম দেখলাম। সবাই বলছে টেকসই হবে। আবার অনেকে বলছে যে রাস্তায় সমস্যা হবে পিছলে যাবে। এই রাস্তা দেখে লোকে চমকে গেছে যে এরকম রাস্তা হয়।' 


টেকসই হলে আগামীদিনে জেলার অন্য়ান্য জায়গায় নীল সাদা রাস্তা তৈরি করা হবে। রায়নার পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ ও বিধায়ক শম্পা ধাড়া বলেন, 'এই রাস্তা ভারবর্ষের মধ্যে প্রথমবার। এই রাস্তা যদি টেকসই হয় তাহলে আমরা পূর্ব বর্ধমান জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে নীল সাদা রাস্তা তৈরি হবে।' 


পঞ্চায়েত ভোটের আগে নীল সাদা রাস্তা তৈরি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এনিয়ে শাসকদলকে নিশানা করেছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপির বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'এই রাজ্যের মাননীয়া উনি চান সব জায়গায় নীল সাদা রঙ করতে। আগামীদিনে হয় তো দেখা যাবে আরও অন্য জায়গাতে নীল সাদা রঙ করছেন। এই রাস্তায় যে উদ্দেশ্যে উনি নীল সাদা রঙ করেছেন বলছেন যদি সেই উদ্দেশ্য সফল হয় সাধুবাদ জানাব। কিন্তু, যে যে ক্ষেত্রে উনি নীল সাদা রঙ করেছেন সেই সেই ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে। সবের মধ্যে নীল সাদা রঙ ঢুকিয়ে উনি রাজনীতি করতে চান'। 


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'যে রাস্তাটি তৈরি হয়েছে সেটা একটা পরিবেশবান্ধব রাস্তা। যে প্লাস্টিকগুলি ব্যবহার হয় না অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা করে এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। যাতে রাস্তাটা অনেকদিন টেকসই হয় এবং মানুষ চলাফেরা করতে পারে তাই এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। দুবাই সহ বিদেশে এরকম রাস্তা তৈরি হয়েছে।'   


এর আগে রং-রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। সরকারি ভবন থেকে সেতু, রাস্তার রেলিং স্টেডিয়াম থেকে ট্যাক্সিতে লেগেঠে নীল-সাদা পোঁচ। রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের ইউনিফর্ম নীল-সাদা করার সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক কম হয়নি। 


এমনকী ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে জড়ানো হয়েছে নীল-সাদা আলোর মালা। বাড়িতে নীল-সাদা রং করলে সম্পত্তি করে ছাড় দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও হয়। মেট্রোর পিলারে নীল-সাদা রং করার জন্য পুরসভার আবেদন ঘিরেও বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। এই প্রেক্ষিতেই নীল-সাদা হল রায়নার রাস্তা।