সৌভিক মজুমদার, ঝিলম করঞ্জাই ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু এবং রক্ষাকবচ নিয়ে মামলায় ফের প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। পাঁচ বছর আগের ঘটনায়, নতুন করে মামলা শুরুর প্রয়োজন কী, প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি (Calcutta High Court)। এর পাল্টা রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানালেন, সেই সময় রাজ্যের ক্ষমতাশালী মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু। তাই অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছিলেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে শুনানিতে উঠে এল নিয়োগ দুর্নীতি এবং ED-র ভূমিকাও।
দু-বছর আগেও কলকাতা হাইকোর্ট যে প্রশ্ন তুলেছিল, বুধবারও কার্যত সেই একই প্রশ্ন উঠল। শুভেন্দুর নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু ও রক্ষাকবচ সংক্রান্ত মামলায় ফের আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। ঘটনার পাঁচ বছর পর নতুন করে মামলা শুরুর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত। তাতে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী।
২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ হন রাজ্যের তত্কালীন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দুর দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তী ওরফে বাপি। একদিন পর কলকাতার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার তিন বছর পরে, ২০২১-এর ৭ জুলাই স্বামীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাঁথি থানায় FIR করেন শুভব্রত-র স্ত্রী।- বুধবার সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্য সরকারের তরফে এদিন আদালতে সওয়াল জবাব কতরছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Primary TET : চলতি বছরে প্রাথমিক টেটের দিন ঘোষণা
এদিন আদালতে মৃতের স্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরেন কল্যাণ। তাতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, "প্রশ্ন একটাই যে, এতদিন পরে কেন?" এর উত্তরে কল্যাণ বলেন, "সেই সময় শুভেন্দু ক্ষমতাশালী মন্ত্রী ছিলেন। ভয়ে মৃতের পরিবার অভিযোগ করতে পারেনি।" আদালতে মৃতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের প্রসঙ্গও ওঠে। সেটি দেখে বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, আত্মহত্যার তত্ত্ব জোরাল। কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে।"
এত দিন পর কেন মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করছেন, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। বলেন, " ঘটনার পাঁচ বছর বাদে যদি নতুন করে মামলা শুরু হয়, তাহলে এই ধরনের কত নতুন মামলা শুরু হবে ভাবুন! নতুন করে মামলা শুরু করার প্রয়োজনীই বা কী?"
তার পাল্টা শুভেন্দুর প্রভাবশালী হওয়ার বিষয়টি আদালেত তুলে ধরেন কল্যাণ। যে গ্রামে থাকেন মৃতের স্ত্রী, সেখানে অভিযোগ জানানো সম্ভব হয়নি বলে জানান। তাতে বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন, "কিন্তু, মৃতের স্ত্রী-র অভিযোগ দেখে কোথাও হত্যার অভিযোগ পেলাম না। তিনি শুধু এটাই বলেছেন যে, অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি করেছে।"
এ নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, দেহরক্ষীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। শুভেন্দু বলে কি তদন্ত হবে না, এই প্রশ্নও ছুড়ে দেয় তারা। আদালতের এদিনের শুনানিতে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠে আসে। চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার মামলায় রাখাল বেরা এবং চঞ্চল নন্দীর নাম জড়িয়েছিল। টাকা দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে। তা সত্বেও ED কেন চুপ, প্রশ্ন তোলেন কল্যাণ। তৃণমূলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছে ED, কিন্তু শুভেন্দুর বেলায় চুপ কেন, প্রশ্ন তোলেন।
শুভেন্দুকে রক্ষাকবচ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কল্যাণ। বলেন, "বিরোধী দলনেতা আদালতের রক্ষাকবচ পেয়েছেন। মাথার উপর ছাতা আছে। তাই তদন্ত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিজেপি-র নেতাদের জন্য একরকম আইন, আর বিরোধী নেতাদের জন্য অন্য আইন থাকতে পারে না। চঞ্চল নন্দী যখন আদালত থেকে রক্ষাকবচ জোগাড় করতে পারেননি, শুভেন্দু অধিকারী নতুন করে মামলা করে রক্ষাকবচ পেয়েছেন।"
পুলিশ সুপারকে হুমকির অভিযোগ নিয়েও সরব হন কল্যাণ। বলেন, "পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে অনন্তনাগে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রীয় সরকারে, তাঁর হাত আছে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।" তাতে বিচারপতি সেনগুপ্ত প্রশ্ন বলেন, "মন্তব্যগুলি রুচিসম্মত নয়। কিন্তু তার ভিত্তিকে কি এই ধরনের মামলা হয়? যে হুমকি বিরোধী দলনেতা দিয়েছেন, সেইরকম কিছু ঘটনা কি ঘটেছে? তা নিয়ে মানহানির মামলা হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে মামলা দায়ের হয়েছে, সেটা কি হয়? মামলায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করার ধারা আছে। কিন্তু সরকারি কর্মীর কাজে বাধা দেওয়ার ধারা আছে কি?" আগামী ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।