সৌভিক মজুমদার, দীপক ঘোষ, কলকাতা : বিনা লড়াইয়ে উলুবেড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থীকে জেতানোয়, SDO এবং BDO-কে সাসপেন্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআরের সুপারিশ করেছে হাইকোর্ট নিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কমিটি। যে সুপারিশ পাওয়ার পরই সাসপেন্ড নিয়ে রাজ্য় সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)।


এবারের পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election 2023) বেনজিরভাবে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে বিডিওদের বিরুদ্ধেও। এবার এক সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বিকৃতির মামলায় সংশ্লিষ্ট BDO-SDO সহ কয়েকজন আধিকারিককে সাসপেন্ডের সুপারিশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটি। তাঁদের বিরুদ্ধে FIR করতে হবে বলেও সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।


ঠিক কী হয়েছিল ? গত ২১ জুন হাওড়ার বহিরা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খান ও ধূলাসিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী তনুজা বেগম মল্লিক কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। মামলাকারী কাশ্মীরা বেগম খানের তরফে আদালতে অভিযোগ করা হয়, তাঁদের মনোনয়নপত্র বিকৃত করেছেন উলুবেড়িয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে। যার ফলে স্ক্রুটিনিতে তাঁদের নাম বাদ গেছে। 


এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হা CBI তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি সিন্হার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি, এর তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-কে নিয়ে ১ সদস্যের কমিটি তৈরি করেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হা।


বৃহস্পতিবার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে অনুসন্ধান রিপোর্ট দিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্র করে মনোনয়নপত্র বিকৃত করা হয়েছে। BDO, SDO এই কাজে ষড়যন্ত্র করে থাকতে পারেন। একইসঙ্গে এই চক্রে যুক্ত থাকতে পারেন অনগ্রসর শ্রেণির দফতরের অফিসার। তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে পদক্ষেপ করতে হবে। দেবীপ্রসাদ দে পর্যবেক্ষণে জানান, কাশ্মীরার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তৃণমূল প্রার্থী লুৎফানেসা  বেগমের OBC সার্টিফিকেট জাল। কিন্তু, SDO অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনও পদক্ষেপ না করে আবেদনকারীকে নথি দিতে বলেন।


কমিটির অনুসন্ধান অনুযায়ী এদিন আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, উলুবেড়িয়া-১ নম্বর ব্লকের বহিরা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত।সিপিএম প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খান ওবিসি সম্প্রদায়ের। কিন্তু, তদন্তে তৃণমূল প্রার্থী লুৎফানেসা বেগম ওবিসি সম্প্রদায়ের নন বলে স্বীকার করে নেন।অসত্য তথ্য দিয়ে তাঁকে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, তৃণমূল প্রার্থীর ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই নেই। তথ্য বিকৃত করে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। আর এই পুরো ঘটনায় সরকারি আধিকারিকরা যুক্ত।


বৃহস্পতিবার, এই মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিন্হা বলেন, আদালত মনে করছে, বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে, জাতি শংসাপত্র বিভাগের অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর কৃপাসিন্ধু সামুই, উলুবেড়িয়ার এসডিও শমীককুমার ঘোষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করুন। এবং দ্রুত তাঁদের সাসপেন্ড করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। যা নিয়ে দ্রুত রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে আদালত। এবার প্রশাসন এব্য়াপারে কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।


আরও পড়ুন- 'রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার কিংপিন', পার্থ-র জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে ইডির পাল্টা